খাদ্য-পুষ্টি

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে রসুন || শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্টেরল দূর করে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: রসুন একটি মসলা জাতীয় খাদ্য উপাদান। রান্নার মসলা হিসেবে রসুনের ব্যবহার সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসছে। রান্নার স্বাদকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুধু নয়, রসুনের পুষ্টিগুণ রসুনকে পৌঁছে দিয়েছে মসলার অন্যতম তালিকার মধ্যে। তাই রান্নার পাশাপাশি রসুন স্বাস্থ্য ভাল রাখার ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।

অনেক বছর আগে থেকে রসুন ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতিই রসুনকে বিভিন্ন রোগ নিরায়মের জন্য ব্যবহার করে আসছে। রসুনে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ময়শ্চার, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেল ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট।

ভিটামিন ও মিনারেলের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থিয়ামিন, রিবোফ্লোভিন, ভিটামিন সি। এছাড়া রসুনে আয়োডিন, সালফার ও ক্লোরিনও রয়েছে অল্প পরিমাণে।

আরও পড়ুন: করোনার টিকা নেয়ার পর কোন খাবার খাবেন কোনটা খাবেন না

খালি পেটে রসুন খেলে বিভিন্ন রোগ দূর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধও গড়ে তোলা যায়।

রসুনের উপকারিতা

১. রসুনের সাপ্লিমেন্ট বা কাঁচা রসুন খেলে ফ্লু এবং কমন কোল্ড তাড়াতাড়ি সেরে যায়। এর কারণ রসুন খেলে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়।

২. কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ যেমন- হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর কারণে সারা পৃথিবীতে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হৃদ রোগের মুখ্য কারণ। কিন্তু দেখা গেছে রোজ চার কোয়া করে রসুন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৩. শরীরে কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখে রসুন। নিয়মিত খেলে শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্টেরল কমে যায় এবং গুড কোলেস্টেরল এর বৃদ্ধি হয়।  

৪. রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট “সেল ড্যামেজ” এবং “এজিং” রোধ করে । এর ফলে অ্যালঝাইমারস ডিসিজ এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। যেহেতু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে তাই ক্রনিক ডিসিজ কম হয়। ফলে আপনার দীর্ঘজীবি হওয়ার সম্ভবনা অনেকেটা বেড়ে যায় এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।

৫. এমনিতেই একটা বয়েসের পর মহিলাদের হাড়ের জোর কমে যায়। দেখা গেছে রোজ ২ গ্রাম করে রসুন খেলে মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে হাড় সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায়।

৬.  যে সব মহিলাদের মেনোপোজ হয়ে গেছে তারাও নিয়মিত রসুন খেলে অনেক উপকার পাবেন। যেহেতু রসুনে অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি আছে তাই স্কিন ইনফেকশন এর চিকিৎসায় কাজে লাগে।

৭. রসুনে উপস্থিত সালফার অরগ্যান ড্যামেজ থেকে এবং শরীরকে লিড থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

রসুনের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক

রসুন যত উপকার ততটা ক্ষতিকর। দিনে ২ কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না। রান্নায় এটি ব্যবহার হলেও দিনে মাত্র ২ কোয়া রসুন ব্যবহার করতে হবে ।

১. যাদের রসুন খাওয়ার ফলে এলার্জি হবার আশঙ্কা থাকে বা হয় তাদেরকে অবশ্যই কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

২. যাদের রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ব্যথার সমস্যা হয়, বমির প্রাদুর্ভাব হয় বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভাল। আবার অতিরিক্ত খেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতেও পারে তাই বেশি রসুন খাওয়া ঠিক নয়।

৩. অনেকের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, অতিরিক্ত রসুন খাওয়া তাদের জন্য বিপদ জনক। কারণ, রসুন রক্তের জমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে। ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে অসুবিধা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রসুন না খাওয়াই উত্তম।

৪. রসুন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি বোধ করলে রসুন খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

৫. শিশুকে দুগ্ধদানকারী মায়েদের রসুন না খাওয়াই ভাল। কারণ রসুন খাওয়ার ফলে তা মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুরপাকস্থলীতে ঢুকে শিশুর যন্ত্রণার কারণ ঘটাতে পারে। অনেকের রসুনের গন্ধ সহ্য হয় না।

রসুনকে ওষুধের বড়ি হিসেবে তৈরি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। রসুন নরম হয়ে গেলে বা সবুজ রঙ দেখা দিলে সেই রসুন কিনবেন না। কারণ এসব রসুনের কার্যগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কেনার সময় মাঝারি আকারের রসুন কিনতে হবে। রসুন বন্ধ পাত্রে না রেখে খোলা পাত্রে রাখা ভাল। ভুলেও রেফ্রিজারেটরে রসুন রাখবেন না। এতে করে রসুন নরম হয়ে যাবে। নরম রসুন স্বাস্থ্যকর নয়। ভাজার জন্য বা কারি পেস্টের জন্যও রসুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *