আইন আদালত

পরীমণির পাশে কেন দাঁড়াবেন? কী বলছেন নারী নেত্রীরা

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: চিত্রনায়িকা পরীমণিকে গ্রেফতারের পর লেখক, শিল্পী অ্যাক্টিভিস্টদের একাংশ তার পাশে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে পরীমণির অনেক সহশিল্পীকে তার পাশে দেখা যায়নি। এই দুইয়ের বিতর্কের মধ্যে অ্যাক্টিভিস্ট ও নারী আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, তারা ন্যায়বিচার চান। পরীমণির সঙ্গে যা করা হয়েছে তা সংবিধান ও আইনসম্মত উপায়ে করা হয়নি। তারা বলছেন, এই সমাজ শিরদাঁড়া সোজা করে রাখা নারীদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে চায়। পরীমণি এখন সেই প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

পরীমণির জামিন, ন্যায়বিচার ও মুক্তি নিয়ে প্রেসক্লাব, টিএসসি ও শাহবাগে বেশকিছু প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। শুরুর দিকে তরুণ প্রজন্ম শুরু করলেও এরপরে যুক্ত হন বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নারী আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে পরিচিতরাও। গত ২২ আগস্ট শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কীভাবে রাষ্ট্র নিজেই তার একজন নাগরিককে এরকম হেনস্তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়?’

পরীমণিকে মদসহ আটকের পরে মদের বোতল নিয়ে মডেল হয়ে ফেসবুকে ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। পরীমণির পাশে কেন দাঁড়াতে হবে—বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পরীমণির পাশে দাঁড়াতে হবে। কেননা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ/ পরোয়ানা ছাড়া তার গ্রেফতার, রিমান্ড, জামিন না দেওয়া, আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে না দেওয়া সবকিছুতেই আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরীমণির পাশে দাঁড়াতে হবে, কেননা, নারী ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে তার প্রতি যতো যৌন সহিংস কথা রাষ্ট্রপক্ষ, গণমাধ্যম, ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, তাতে আমি নারী হিসেবে আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

 ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবীর বলেন, পরীমণির সঙ্গে যে আচরণ রাষ্ট্র করেছে তা সংবিধান আইন পরিপন্থী। নাগরিক হিসেবে তার যে মর্যাদা পাওয়ার কথা সেটা পুরো প্রক্রিয়াকালীন অনুপস্থিত। এই অনুপস্থিতির কারণ তাকে টার্গেট করা হয়েছে। যেহেতু সে নারী, অভিনয় শিল্পী এবং তরুণ। এমনকি তাকে জামিন  দিচ্ছে না, তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। নাগরিক হিসেবে যা যা পাওয়া তা থেকে পরীমণিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি মনে করি তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। কোনও নাগরিকের সঙ্গে এ ধরণের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য না। আমরা নাগরিকেরা যদি না দাঁড়াই তবে এরকম যে কারও সঙ্গেই ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, নারী বলে তার চারিত্রিক বিষয়গুলো ট্রল করার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে সেটার মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সেটি মানুষকে উস্কে দেওয়ার সামিল।

লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, প্রথমত পরীমণি একজন নাগরিক। তিনি নারী নাকি পুরুষ নাকি শিল্পী তাতে কিছু যায় আসে না। নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক যে অধিকার সেটি তার ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে। তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সে যদি সত্যি সত্যি কিছু করে থাকে তাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা যেতো। যেকোনও নাটকীয়তা সন্দেহের উদ্রেগ করে। দ্বিতীয়ত কে দুশ্চরিত্র আর কার চরিত্র ভাল সেটি কে ঠিক করে দেবে?

আমার সমাজে প্রচলিত আছে, খারাপ মেয়ের সঙ্গে সবকিছু ঘটানো যায়। পরীমণির ব্যক্তিগত বিষয় সামনে এনে তাকে খারাপ মেয়ে প্রমাণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। আমরা এই তৈরি করে দেওয়ার প্রতিবাদ করেছি। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার যে অধিকার, জামিনের যে অধিকার তার কোনটিই তিনি পাননি। পরীমণি প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। শিরদাঁড়া সোজা করে রাখে যারা তাদের নিয়ে সমাজের অনেক সমস্যা। আমরা চাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।

পরীমণির পাশে কেন দাঁড়ানো জরুরি এমন প্রশ্নে চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা বলেন, পরীমণির অপরাধ এখনও প্রমাণিত নয়। শুরুর সময়ে তার বাসায় অভিযানের যে ধরন, তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া, এরপরে ধাপে ধাপে রিমান্ড, জামিন না হওয়া এবং সর্বোপরি আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া সবগুলোই পরীমণি নারী বলেই হচ্ছে। নারী বলেই তার বিষয়ে বেশি হচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল। নারী বলেই চরিত্র ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে বলা হয়েছিল সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে কিন্তু আমরা এখনও জানতে পারিনি সেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি কী? যতটুকু অপরাধ তার ততটুকু শাস্তি হোক। আমরা ন্যায়বিচার চাই।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *