মাতৃভূমি

ভারতীয় গোয়েন্দারা বঙ্গবন্ধুকে দুবার সতর্ক করেছিলেন

রমেশ্বর নাথ কাও :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চলতে থাকা ষড়যন্ত্রের কথা জানত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’ (RAW)। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের আগে অন্তত দুবার র–এর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রের কথা বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি জানানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এসব বিশ্বাস করেননি।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW–এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান রমেশ্বর নাথ কাও বা আর এন কাও নিজেই এ তথ্য জানিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত RAW এর দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর উপদেষ্টা ছিলেন।

১৯৮৯ সালে ভারতের কলকাতার ইংরেজি সাপ্তাহিক সানডের ২৯ এপ্রিল সংখ্যায় বাংলাদেশে র–এর ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে আর এন কাও এর কিছু অংশের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সেখানেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেষ্টা এবং তাঁদের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়ার কথা তিনি জানান। এমনিতে আর এন কাও খুব একটা মুখ খুলতেন না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এর ব্যাখ্যা বা প্রতিবাদ হিসেবে তিনি কিছু কথা বলেছিলেন।

আর এন কাও তাঁর প্রতিক্রিয়ায় লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অসন্তুষ্ট অংশ যে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে, সে তথ্য RAW আগেই পেয়েছিল। আমি এ নিয়ে সে সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি। তাঁকে জানাই যে এ তথ্য আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র থেকে পেয়েছি এবং এই সূত্রের নাম যেকোনো মূল্যে গোপন রাখতে হবে।’

আর এন কাও এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে আমি ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা যাই। এই সফরকালে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শেষবার দেখা হওয়ার সময় আমি তাঁকে পায়চারি করতে করতে বঙ্গভবনের বাগানে যেতে অনুরোধ করি। সবার অগোচরে নিয়ে গিয়ে আমি আমার তথ্য তাঁকে জানাই যে তাঁর জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে। তিনি সে সময় আনন্দপূর্ণ একটি পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন। তিনি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেন, “ওরা সবাই আমার নিজের ছেলে। আমাকে আঘাত করবে না।” আমি কোনো ধরনের তর্কের মধ্যে না গিয়ে কেবল বললাম, আমাদের তথ্য নির্ভরযোগ্য এবং এই ষড়যন্ত্রের যেসব তথ্য পেয়েছি, তা বিস্তারিত পাঠাতে পারব।’

আর এন কাও এরপর লেখেন, ‘এই আলোচনার অংশ হিসেবেই ১৯৭৫ সালের মার্চে আমি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠাই। তিনি ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে যেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে, সে অনুযায়ী তাঁকে জানান যে সেনাবাহিনীর দুটি ইউনিট, বিশেষ করে গোলন্দাজ (আর্টিলারি) ও অশ্বারোহী বাহিনী (ক্যাভালরি) তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু দুঃখজনক যে শেখ মুজিব আমাদের সব সতর্কতাই উপেক্ষা করেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এই বার্তা তিনি নানাভাবেই পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই বিশ্বাস করতে পারেননি কোনো বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে।

সূত্র: প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *