স্বাস্থ্য

করোনা নিয়ে ভয়ের কারণ নেই : বিখ্যাত চিকিৎসক নাগেশ্বর রেড্ডি

ধূমকেতু প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাসে ভয়ের কারণ নেই বলে মনে করেন ভারতের খ্যাতিমান চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি। ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ভাইরাসকে জয় করা সম্ভব। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বা জীবন রহস্যের উন্মোচন এবং এর ওপর তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। তার এ বক্তব্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এ ভাইরাসকে ঘিরে নানা কাহিনি আর মিথ্যা সংবাদ তৈরির মাধ্যমে মানুষকে আতঙ্কিত করা হচ্ছে।’

জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি ভারতে হায়দরাবাদে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির (এআইজি) চেয়ারম্যান। এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি হাসপাতাল। চিকিৎসায় অসামান্য অবদান রাখায় তাকে ২০১৬ সালে পদ্মভূষণ পদক দেয় ভারত সরকার। তিনি ২০০২ সালে পদ্মশ্রী পুরষ্কারেও ভূষিত হন। তিনি ২০১৩ সালে চীনের সাংহাইতে বিশ্বের সর্বোচ্চ গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি পুরষ্কার পান।

তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, আমাদের ভীত হওয়া যাবে না একেবারেই। এমন কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়নি যে আমাদের ভীত হতে হবে। আমাদের এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে ইতালি ও ফ্রান্সে যা হয়েছে, এখানে তা হবে। দ্বিতীয় কথা হলো, এই ভাইরাস ১০ বছরের কম বয়সীদের আক্রান্ত করে না। দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। তবে এর সংখ্যা খুব বেশি নয়।

আর বয়স্কদের জৈবিক বয়সের চেয়ে শারীরিক বয়সটি বেশি তাৎপর্য বহন করে। সাধারণভাবে যাদের বয়স সত্তেরর বেশি এবং যাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা ক্যানসার আছে, তাদের এই ভাইরাস মারাত্মকভাবে ঘায়েল করতে পারে। কিন্তু এমন শারীরিক সমস্যা না থাকলে ৬০-৬৫ বছর বয়সীদেরও ভয়ের কারণ নেই। শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান যে কারও জন্য এই ভাইরাস বড় কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। দেখুন, ভারতে এখনো এমনকি বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর হার ইতালির মতো না। তাই আমার কথা, ভয় দূর করতে হবে।’

মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাওয়া উচিত উল্লেখ করে এ গবেষক বলেন, ‘ভারতে তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে। এ লকডাউন আর বাড়ানোর দরকার নেই।’

বেশি তাপমাত্রায় এ ভাইরাস বাঁচতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে নাগেশ্বর রেড্ডি বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনো বিস্তর বিতর্ক আছে। কিন্তু এমআইটির যে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে এই ভাইরাসের তাপ-সহনশীলতার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এটি দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারবে না। এখানে ভারতের ক্ষেত্রে বলা যায়, মে মাসে যখন তাপ আরও বাড়বে, তখন ভাইরাসের সংক্রমণের হার কমে যেতে পারে। তাপমাত্রার একটা ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু তা হবে মে মাসের পর।’

করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেছেন নাগেশ্বর রেড্ডি। তিনি তার গবেষণার বিষয় উল্লেখ করেন। ইতিহাসের বিষয়ের উপর দৃষ্টি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে চীনের উহানের সামুদ্রিক প্রাণীর একটি বাজারে এর উৎপত্তি হয়েছে। এরপর এটি ছড়িয়েছে। উহান থেকে এটি পশ্চিমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ছড়িয়েছে। ছড়ানোর দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পরোক্ষভাবে এটি ভারতে এসেছে। তাই একে বুঝতে তিন থেকে চার সপ্তাহের একটা ফাঁক রয়ে গেছে। করোনাভাইরাস আরএনএ ভাইরাস। এ সুনির্দিষ্ট ভাইরাসটির সঙ্গে বাদুড়ের সম্পর্ক আছে। যদিও আমরা এখনো জানি না, এটি বাদুড় থেকে এসেছে কি না। তবে বাদুড় থেকে মানুষে ছড়াতে এর একটি ছোট পরিবর্তন ঘটেছে।’

ভাইরাসের জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানান নাগেশ্বর রেড্ডি। তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস যখন ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতে ছড়িয়েছে, তখন এর জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়েছে। চারটি দেশ—প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, পরে ইতালি, এরপর চীন এবং চতুর্থত, ভারতে এর জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ইতালিতে ছড়ানো ভাইরাসের সঙ্গে ভারতে ছড়ানো ভাইরাসের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর গুরুত্ব অত্যধিক হতে পারে। কারণ, ভারতের ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানবশরীরের কোষে সংযুক্ত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে কম যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ, এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।’

ইতালিতে বেশি মারা যাওয়ার কারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতালিতে এ ভাইরাসের আরএনএতে তিনটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হয়েছে। আর এর ফলে এটি মানুষের জন্য আরও মারাত্মক হয়ে পড়েছে। ইতালিতে অন্য কিছু বিষয় কাজ করেছে। সেখানে মারা যাওয়া বেশির ভাগ মানুষের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস একটি বিষয়। এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপেরও আধিক্য আছে। এসব মিলিয়ে সেখানে মৃত্যুর হার সাধারণের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতে এ হার ২ শতাংশ।’

তিনি জানান, এর আগে যতগুলো করোনাভাইরাস দেখা গেছে, সবগুলোর মধ্যেই ঋতুভিত্তিক একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। সার্স, মার্স, সোয়াইন ফ্লু—সবকিছুতেই ঋতুর একটি প্রভাব ছিল। কিন্তু এর পর একটা আশা আছে যে আমরা হয়তো একটা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব। তাই আগামী বছর এ সময় আমরা হয়তো একটা রক্ষাকবচ পাব। কিন্তু আগামী ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। তবে সে সময় কোনো পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকলেও টেস্টটি অনেক কমে যাবে এবং এটি সহজ হবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *