ড. আনোয়ারুল ইকবাল
দেশে প্রথমবারের মতো দুজনের শরীরে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ভারতে বিরল ছত্রাকজনিত রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশেও শনাক্ত হলো ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চলতি মাসে তাদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয়।
জানা গেছে, “গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেকজনের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে বাংলায় ছত্রাক বলে। নোংরা, অপরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে এটা হয়। এটা বেশিরভাগ মাটিতেই থাকে।”
মহামারী হলে দেখা যায়, যে কোনো ব্যাধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ইংরেজি পরিভাষা হলো মিউকরমাইকোসেটস (mucormycetes)। মিউকরমাইকোসেটস আক্রমণ করলে মানুষ মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis) রোগে আক্রান্ত হয়।
“ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে চোখ ফুলে যায়, নাকটা ভার ভার অনুভূত হয়। সাধারণত এটি নাক-মুখ দিয়েই শরীরে প্রবেশ করে। যাদের অতিমাত্রায় ডায়াবেটিস আছে তাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সামান্য পরিমাণে ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে ক্যান্সার আছে, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছেন, রক্তে শ্বেতকণিকা কম আছে এমন ব্যক্তিদেরও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।”
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও করোনাভাইরাসের মধ্যকার সম্পর্ক কী?
ভারতের মেডিকেল তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও করোনাভাইরাসের মধ্যকার সম্পর্ক কী? করোনা তো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটি রক্তের উপাদানের মধ্যকার ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যখন নাক-মুখ দিয়ে শরীরে ঢোকে তখন রক্তনালীকে আক্রমণ করে। আক্রমণের পর সেখানে কালো কালো দাগ হয়ে যায়। রক্তনালীকে নিস্তেজ করে ধ্বংস করে ফেলে। রক্তের মাধ্যমে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দ্রুত নাক, মুখ ও মস্তিষ্কের দিকে যায়।
ভারতে দেখছি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চোখে আক্রমণ করার পর চোখ তুলে ফেলা হচ্ছে। কারণ এটি চোখের পরই মস্তিষ্ককে আক্রমণ করবে। আর মস্তিষ্কে এটি আক্রমণ করলে রোগী বাঁচবে না। তাই জীবন বাঁচাতে তখন চোখ তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
লেখক: সাবেক প্রধান, মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রস্তুতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।