ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামের মাঠে প্রথম টেস্টে কোনোরকমে পঞ্চম দিনে খেলা নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। তবে হারের বোঝা ছিল বেশ বড়সড়ই। ঢাকার মিরপুর শের ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই পরাজয়ের গ্লানি সরিয়ে নতুন বছরের শেষ খেলায় জয়ের রঙিনে রাঙাবে বাংলাদেশ, এমনটাই আশা সমর্থকদের।
তবে মিরপুরের মাঠে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যথারীতি বিবর্ণই বলা চলে। সকালে যে মাঠে খেলা কষ্টসাধ্য ছিল। সময়ের সঙ্গে সেটি অনেকটাই ব্যাটসম্যানদের পক্ষে আসতে শুরু করেছিল। তবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটটা ঠিক কীভাবে খেলতে হবে, সে ধারণা এখনো খুঁজে না পাওয়া বাংলাদেশ নিজেদের পারফরম্যান্সে উন্নতি করতে পারলো না।
শের ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেবল দুটি। এক, টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। দুই, মুমিনুল হকের রানে ফেরা। লম্বা সময় ধরে সিঙেল ডিজিটের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন মিমি। রানটাই করতে যেন ভুলে গেছিলেন। আত্মবিশ্বাসও ছিল না কিছু।
সেই মুমিনুলের ঘাড়ে ভর করে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে কোনো রকমে ২২৭ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ১২ ইনিংস পর ফিফটির দেখা পেয়েছেন। যার ফলে বাংলাদেশ পেরেছে দুইশ’র কোটা পেরোতে।
মিরপুরে এদিন সকাল থেকে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছে ভারতীয় বোলাররা। খেলা শুরু হওয়ার দ্বিতীয় ওভারের মাথায় তো ক্যাচও তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওপেনার জাকির হাসান। তবে উমেশ যাদবের বলে তুলে দেওয়া সেই ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি মোহাম্মদ সিরাজ। তবে ক্যাচ না নিতে পারলেও উমেশের সঙ্গে মিলে সিরাজ টাইগার ব্যাটসম্যানদের বেশ চাপেই রেখেছিলেন।
পরবর্তীতে এই দুইজনের সঙ্গে যুক্ত হন আরেক পেসার জয়দেব উনাদকাতও। টেস্ট অভিষেকের ১২ বছর পর আবারও এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে মাঠে নামার সুযোগ পান এই বাঁহাতি ভারতীয় পেসার। আর মাঠে নেমেই টেস্টের প্রথম উইকেটও শিকার করেন অভিষেকের ১২ বছর পরে।
মাঠ থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে উইকেট তুলে নেন উনাদকাত। ১৫ রান করা জাকির হাসান ফেরেন ক্যাচ দিয়ে। নিজের ওপেনিং পার্টনারকে হারানোর ৪ বলের মাথায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন নাজমুল হোসেন শান্তও।
সকাল থেকে দারুণ খেলতে থাকা শান্ত অশ্বিনের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে ২৪ রান করে থামতে বাধ্য হন। ৪ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া টাইগারদের আবার স্থিরতা এনে দেন দুই অধিনায়ক মুমিনুল এবং সাকিব।
দুইজনে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। তবে লাঞ্চ ব্রেক থেকে ফিরে মাঠে নামতেই ১ বলের মধ্যেই আউট হয়ে যান সাকিব। করতে পারেন মোটে ১৬ রান। পাঁচে নেমে মুশফিকুর রহিমও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে ফেরেন তাড়াতাড়িই।
টেস্টে টানা চতুর্থবারের মতো বিশের ঘরে আউট হয়ে ফেরেন মুশি। করেন ২৬ রান। মুশফিকের বিদায়ের পর মাঠে নেমেই চালিয়ে খেলতে থাকেন লিটন। তবে ২৬ বলে ২টি চার ও ১টি ছয়ে ২৫ রান করে ফেরেন তিনিও।
টি ব্রেকের আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ বিরতিতে যায় ৫ উইকেটে ১৮৪ রানের স্কোর নিয়ে। তবে টি ব্রেক থেকে ফেরার পর আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস।
মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫, নুরুল হাসান সোহান ৬ রান করে বিদায় নিলে টেল এন্ডাররা মুমিনুলকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মুমিনুলও ১৫৭ বলে ১২টি চার ও ১টি ছয়ে ৮৪ রান করে ফেরেন। টেস্ট ফরম্যাটে ১২ ইনিংস পর ফিফটির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল।
ভারতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি সফল বোলার ছিলেন পেসার উমেশ যাদব। ১৫ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে এই পেসার তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়াও ৪ উইকেট নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। তবে তিনি ৩ এর বেশি ইকোনমিতে রান দিয়েছেন ৭১টি। ভারতের পক্ষে বাকি ২ উইকেট তুলে নেন অভিষেকের ১২ বছর পর আবার টেস্ট খেলতে নামা জয়দেব উনাদকাত।
দিনের বাকি আরও ১৬ ওভার থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারত খেলতে নামে ৮ ওভার। আর তাতে ১৯ রান তোলে ভারতের দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল এবং শুভমান গিল। ১৪ রান নিয়ে গিল এবং ৩ রান নিয়ে রাহুল দ্বিতীয় দিন সকালে শুরু করবেন।