নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: পেঁয়াজের সঙ্কট মোকাবিলায় এবার পেঁয়াজের গুঁড়া ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। মসলা বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পেঁয়াজ গুঁড়া করে ব্যবহারে একই স্বাদ ও মান থাকবে। কাঁচার চেয়ে পেঁয়াজের গুঁড়া ব্যবহার হবে বেশি সাশ্রয়ী। এ প্রক্রিয়ায় দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজের পচনরোধ করা সম্ভব।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশীয়ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ২৩ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিক টন। ১১ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রতিবছর ঘাটতি থাকে। যা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।
মসলা বিজ্ঞানীরা বলছেন, পেঁয়াজ গুঁড়া করার পদ্ধতি খুব সাধারণ। খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজ প্রথমে স্লাইস করে ভাব দিতে হবে। পরে তা শুকিয়ে সোডিয়াম মেটাবাইসারফেট দ্রবণে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর তা শুকাতে হবে। এরপর সাধারণ ব্লেন্ডিং মেশিনেই এটি গুঁড়া করা যাবে।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ আলম জানান, পেঁয়াজের গুঁড়া করলে এর গুণগত মাণ, খাদ্যে ব্যবহারের পরিমাণ কোনোটাই কমে না। এক কেজি পেঁয়াজের শুকিয়ে গুঁড়া পাওয়া যায় ১০০-২০০ গ্রাম। রান্না করার ক্ষেত্রেও অনুপাত এভাবে বন্টন হয়।
তার মতে, এক কেজি মাংস রান্না করতে কাঁচা পেঁয়াজ লাগে ২৫০ গ্রাম। আর এই ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজের গুঁড়া করলে পাওয়া যাবে ২৫ গ্রাম। মাংস রান্নাতে পেঁয়াজের গুঁড়া ২৫ গ্রাম দিলেই হবে। তাদের উদ্ভাবিত পেঁয়াজের গুঁড়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সংরক্ষণের সময়জনিত আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
পেঁয়াজের গুঁড়া এক বছর প্যাকেটজাত করে সংরক্ষণ করা যায়। এতে বারী জাতের উচ্চ ফলনশীন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের পর তা গুঁড়া করে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ঘাটতি যেমন থাকবে না, তেমনি কৃষকরাও ন্যায্যমূল্য পাবেন। আর উচ্চ ফলনশীল বারী জাতের পেঁয়াজের চাষে কৃষকদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামীম রেজা বলেন, পেঁয়াজের গুঁড়া পদ্ধতি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এটি বাণিজ্যিকভাবে না করে শুধু ঘরোয়াভাবে করলেও লাভ। তাতেও দেশে পেঁয়াজের আমদানি কমবে।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ড. মাসুদ আলমের তত্ত্বাবধানে গবেষণাগারে গুঁড়া পেঁয়াজের উৎপাদন চলছে। তিনি জানালেন, জাপান, চীন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বহু দেশেই পেঁয়াজের গুঁড়ার প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে নেই। এ কারণে তিনি প্রায় ৩ বছর ধরে পেঁয়াজের গুঁড়া করে সংরক্ষণের বিষয়ে গবেষণা করেন।
তিনি জানান, খুব সাধারণভাবে যেকোনো উদ্যোক্তারা ঘরে বসেই এই পেঁয়াজের গুঁড়া উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে পেঁয়াজের আর সংকট থাকবে না।