অভিমত

শুভ জন্মদিন সজীব ওয়াজেদ জয়

তাপস হালদার:
২৭ জুলাই ১৯৭১, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল একটি সময়ে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে জন্ম নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। বাবা খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, মা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জন্মের অনেক পূর্বেই ‘জয়’ নামটি রেখেছিলেন নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ‘একাত্তরে ২৩ শে মার্চ আমি তখন সন্তান সম্ভবা। এই দিন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হল। আমাদের বাসা ৩২ নম্বরেও পতাকা তোলা হল।আমি আব্বার হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলাম, তখন আমাকে বললো তোর একটা ছেলে হবে। আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে, ছেলের নাম রাখবি ‘জয়’। আমি দেখে যেতে পারব কিনা জানি না, তবে তোর ছেলের নাম জয় রাখবি। আমি আব্বার সাথে সব সময় একটু বেশি কথা বলতাম। আমি বললাম মেয়ে হলে নাম কি হবে? মেয়ের নাম দেন।তিনি মেয়ের নাম খুঁজতে গেলে খুঁজে টুঁজে পছন্দ হলো না। বললেন, না তোর ছেলে হবে, তুই ছেলের নাম রাখবি জয়, সে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে’। বঙ্গবন্ধু জানতেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, জয় সেই স্বাধীন বাংলাকে সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রসৈনিক হয়ে কাজ করবে।

আরও পড়ুন: ভূতুরে সব বিল করে নিচ্ছে সবি লুটেপুটে, ভয়ঙ্কর সব দানবেরা খাচ্ছে সবি চেটেপুটে

১৯৭৫ সালে নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তিনি মা- বাবার সাথে জার্মানি, লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন ।ফলে শৈশব ও কৈশোরটা ভারতেই কেটেছে। ভারতের নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন। পরে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে ক্যারিয়ার শুরু করেন।হয়ে উঠেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

২০০৪ সালে যখন দেশে চরম অরাজকতা পরিস্থিতি, তখনই তিনি বাংলাদেশে আসেন। মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে পথচলা শুরু।পরবর্তীতে ২০০৭ সালে যখন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নিয়ে মাইনাস টু-র আড়ালে গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সভা-সমাবেশ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বজনমত গঠন করেন। তাঁর এই উদ্যোগ সফল হয়, তৎকালীন সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি ও জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ ডিসেম্বর ‘রূপকল্প ২০২১’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।ইস্তেহারে মূল শ্লোগান ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রযুক্তিবিদ বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। সেদিন বাংলাদেশের অনেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটির অর্থ বুঝেননি। না বুঝে অনেকে আবার ব্যঙ্গবিদ্রূপও করেছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ স্থাপনের মাধ্যমে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ শুরু হয়েছিল সেই অগ্রযাত্রা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য উত্তরসূরী সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগের কারণে গত এক দশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে একবার একটি বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘জয়ের কাছ থেকে আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি।এজন্য সে আমার শিক্ষক। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার মন্ত্র এসেছে জয়ের কাছ থেকে। এমন সন্তানের মা হতে পেরে আমি গর্বিত’।

আমরা যখন দেখি একটি অনুন্নত দেশ প্রযুক্তির বিকাশে কিভাবে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে, সে বিষয়ে যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রশংসা করেন, তখন আমরা পুরো বাংলাদেশই গর্বিত হই।

সজীব ওয়াজেদ জয় মূলত তাঁর মাকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী)অনেক আগে থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ১৯৯৬ সালে সরকারের সময় তিনি কম্পিউটারের উপর ট্যাক্স ফ্রি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যার সুফল বাংলাদেশের জনগণ পেয়ে আসছে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক পিছনের সারিতে ছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত এক দশকে বাংলাদেশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। যেটা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে সারা দুনিয়া এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশে এখন ১০ কোটি ১১ লক্ষ ৮৬ হাজার (গত এপ্রিল মাসের বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য মতে) মোবাইল ফোন গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কৃষি তথ্য, ই-পাসপোর্ট সেবা, ই-টেন্ডারিং, ই-ডকুমেন্ট, ই-ফাইলিং, শিক্ষার্থীদের ই-ভর্তি ও রেজাল্ট কার্যক্রম, ই-গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল, ই-বাস, ট্রেন, বিমান টিকিট, রাইড শেয়ারিং, জমির পর্চা ও মিউটেশন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ যাবতীয় তথ্যই এখন ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে।

‘৯৯৯’ হেল্প লাইন- এটি এখন জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার; যে কোনো দুর্ঘটনা ও প্রয়োজনে পুলিশ কর্তৃক সেবা প্রদান, সেবাটি দেশে একটি নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। ৫৬টি মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ৮ শত সেবা ডিজিটাল প্লাটফরমে নিয়ে আসার জন্য কাজ চলছে, ইতিমধ্যে ৬শত সেবা অনলাইনে চলে এসেছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উচ্চগতির ফাইবার অপটিক্যাল স্থাপনের কাজ চলছে। সারা দেশে ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হয়েছে, দ্রুতই সকল প্রতিষ্ঠানকেই এর আওতায় আনা হবে।

তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি ওয়েব পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়েব পোর্টাল। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য বাংলাদেশ।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগও বাংলাদেশে এসেছে।

তিনি দেশের অগ্রগতির জন্য তরুণ সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছেন। তরুণরাই আগামী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিবে। এজন্যই তিনি ‘লেটস টক’, ‘পলিসি ক্যাফে’ এবং ‘ইয়াং বাংলা’ প্লাটফর্মের সাথে মিলিত হয়ে নিয়মিত মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। তরুণদেরকে তিনি উদ্যোক্তা হতে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পরামর্শ দেন এবং তরুণ-তরুণীদের থেকে কথা শোনেন। ইয়াং বাংলার একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বর্তমান তরুণ ও যুব-সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘২৫ বছর বয়সে কেউ বাচ্চা বা শিশু থাকে না। অথচ আমাদের দেশে ২৫ বছর বয়সী একজন নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে না। তাহলে ভবিষ্যতে তারা নিজ পায়ে কবে দাঁড়াবে? তাদের চাকুরির কথা না বলে নিজ উদ্যোগে কাজ করতে বলুন। তাদেরকে ভুল করতে দিন। কেননা নিজের ভুল থেকে যে শিক্ষা হয় তা আমরা কখনো ভুলি না’।

বৈশ্বিক করোনা কালেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল জনগণ হাতের কাছেই পাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ নেই, অনলাইনে চলেছে ক্লাস, ভার্চুয়াল আদালতে চলছে বিচার কার্যক্রম, সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে প্রশাসনযন্ত্র সব কাজ করছে ই-প্লাটফর্মের মাধ্যমে, চিকিৎসা সেবা চলছে টেলি-মেডিসিন সেবার মাধ্যমে, সব ধরনের কেনাকাটা করা যাচ্ছে ভার্চুয়াল দোকান থেকে। ‘৩৩৩’ হেল্পলাইন নম্বর থেকে করোনা বিষয়ক তথ্য, টেলিমেডিসিন সেবা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, সেলভ করোনা টেষ্টিংসহ যাতীয় সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের মেধা মননের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও নজর কেড়েছে। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ‘গ্লোবাল ইয়ং লিডার’ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নির্বাচিত করে। বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস প্লান ট্রিফিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং ক্যানেক্টিকাটেল ইউনিভার্সিটি অব নিউ হেভেনের স্কুল অব বিজনেসস যৌথভাবে ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কারে ভুষিত করেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক অবৈতনিক উপদেষ্টা। তিনি শুধু প্রযুক্তির বিকাশে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যান, কখনো সামনে আসেন না। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্যপদ প্রদান করলেও সেভাবে কখনও রাজনীতিতে জড়াননি। আওয়ামী লীগের প্রতিটি জাতীয় কাউন্সিলের আগে সারা দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে প্রচন্ড চাপ থাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেয়ার জন্য। প্রতিবারই তিনি সরাসরি পদ গ্রহণের বিষয়টা এড়িয়ে যান। পদ ছাড়াও যে মানুষের পাশে থাকা যায়, দেশের জন্য কাজ করা যায়, সেটার তিনি অনন্য উদাহরণ। অথচ তিনি চাইলে শুধু পদই নয়, প্রচন্ড ক্ষমতাবানও হতে পারতেন। বারংবার দেখেছি, ক্ষমতা তাঁকে কখনোই আকর্ষণ করেনি। এটাই মনে হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের বৈশিষ্ট্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বাংলাদেশের আজ যে অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার। ‘রূপকল্প-২০২১’, ‘রূপকল্প-২০৪১’ ও ‘ডেল্টাপ্লান-২১০০’ বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

নেপথ্যে থেকে যিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য উত্তরসূরী, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার, তরুণ সমাজের আইকন সজীব ওয়াজেদ জয়। আজ তাঁর ৫০তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন। জয়তু সজীব ওয়াজেদ জয়।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।

ইমেইল: haldertapas80@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *