টানা ৯ ঘণ্টা প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশের সহযোগিতায় মুক্ত হলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) ভোর রাতে প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের তালা খুলে দেওয়ার পর নিজ নিজ বাসায় চলে যান শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে এসেছিলাম। এরপর থেকে আমরা মোট ৩৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা অবরুদ্ধ হয়েছিলাম। প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার আমরা মুক্ত হয়েছি।
এর আগে রোববার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ ৩৫ জন। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে বাইরে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। রাত ১টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক দেড়টায় শিক্ষকরাও বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ ক্যাম্পাসে আসে। পরে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ রেজিস্ট্রার ও শিক্ষকদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দেন।
শিক্ষক রওশন আলম বলেন, তিনজন নারী শিক্ষকসহ আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষকদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ছাত্রদের বলা হলেও তারা মুক্ত করে দেয়নি। শিক্ষকদের সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করেছে।
জানা যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন। অপমান সহ্য করতে না পেরে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তাল ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে। ওইদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারি প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতেই থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সিন্ডিকেট সভায় ওই প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেট সভা মূলতবি হওয়ায় রাতেই ফের আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। রোববার দিনভর মহাসড়ক অবরোধ, অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলন চলা অবস্থায় দুজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রোববার (২৪) অক্টোবর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে এসে অবরুদ্ধ হন রেজিস্ট্রারসহ শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী বলেন, আমি এসেছিলাম তাদের ভিসি মহোদয়ের সিদ্ধান্ত জানাতে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংকট কাটিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা বাতেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
- নাইজেরিয়ায় তেল শোধনাগারে বিস্ফোরণ, নিহত ২৫
- সম্প্রীতি সমাবেশে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারকে ৭ প্রস্তাব