মাতৃভূমি

শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ওয়েবিনারে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: জাতীয় শোক দিবস ২০২১ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনেরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ২৫ আগস্ট ২০২১ রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একনাগারে অনুষ্ঠিত “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড : বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান” শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠতম ও প্রথম উপদেষ্টা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ডা. শেখ আবদুল মালেক।

ওয়েবিনারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী কর্তৃক লিখিত মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিসেস নিবেদিতা রায়।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মিহিরলাল সাহা; পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ফাদার ড. তপন ডি. রোজারিও, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তা ছিলেন নটরডেম কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব বাবু রঞ্জিত নাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক চন্দন কুমার সরকার।

ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে সংযুক্ত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক শ্রী মনীন্দ্র কুমার নাথ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য প্রফেসর ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার।

প্রধান অতিথি ডা. এস. এ মালেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মাবলম্বী মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ভাষা আন্দোলনের ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তা থেকে জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষেদের ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ এবং এর ওপর আলোচকদের আলোচনা থেকে আমি অনেক বিষয় জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়। এ সময় সংখ্যালঘুদের ওপর নেমে আসে পাকিস্তানী স্টাইলে নির্যাতন নিপীড়ন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে সরকার প্রধানের দায়িত্বে আসার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়া, এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে সরকারের উচ্চ পদে ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থায় সংখ্যালঘুদের নিয়োগ দেয়া হতো না। এখন এইসব পদমর্যাদাসম্পন্ন স্থানে তারা নিয়োগ পাচ্ছেন। এ কথা বলে তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে কী দেশে সাম্প্রদায়িকতা নেই? এর উত্তরে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতা আছে। দেশে প্রায়ই সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা লক্ষ করা যায়। সমাজের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলেই দেশ ছেড়ে চলে গেলে চলবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহত করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামবহুল জীবনে এবং সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতি তাঁর দৃঢ় অবস্থানের বিভিন্ন উদাহরণ ওয়েবিনারের মূলপ্রবন্ধে তুলে ধরা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনী মেজর ডালিম কর্তৃক “ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ” ঘোষণার কথা উল্লেখ করে, সাম্প্রদায়িতকার দিকে দেশ প্রবাহিত হওয়ার ইঙ্গিত বহনের কথা বলা হয়। এ সময় ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেয়া হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ এর সংবিধানে দেশ ফিরে এসেছে, কিন্তু এখনও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল আছে। সংবিধানের এইরূপ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবী।

মূলপ্রবন্ধে দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি সাম্প্রদায়িক বৈষম্য ও হামলা যথাযথভাবে ‘অ্যাড্রেস’ করার জন্য সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়; সংখ্যালঘু কমিশন; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন; বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখা প্রভৃতি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়।  ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *