বিনোদন প্রতিবেদক,ধূমকেতু ডটকম: রাহুল ও আন্নু—দুজনেই ছিল ভাঙা পরিবারের তরুণ-তরুণী। রাহুল থাকে মায়ের সঙ্গে, আন্নু হোস্টেলে। ঘটনাচক্রে দুজনের দেখা হয় এক থানায়। তাদের প্রেম, অভিমান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া গল্পে একের পর এক গান—সব মিলিয়ে দারুণ এক জমজমাট ছবি ‘আশিকি’। গতকাল সেই ছবি মুক্তির ৩১তম বছরে পা রাখে।
আশিকির নায়ক রাহুল রায়কে নিশ্চয় মনে থাকবে। তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র হিট আশিকি। প্রথম ছবির পরই রাতারাতি স্টার হয়ে ওঠেন রাহুল। বাংলাদেশেও তখন তাঁর দারুণ জনপ্রিয়তা। তাঁর হেয়ারস্টাইল অনুসরণ করতেন এ দেশের অনেক তরুণ। আর ছবিতে আন্নুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সে সময়ে আলোচিত মডেল অনু আগারওয়াল।
চলচ্চিত্রের ভাষায় যাকে বলে ‘মিউজিক্যাল হিট ফিল্ম’, তা–ই ছিল আশিকি। সেই সময়ের তরুণ কণ্ঠশিল্পী কুমার শানুর গাওয়া সুপারহিট সব গান। ভারত, এমনকি বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে, বাড়িতে বাড়িতে, পাড়া–মহল্লা, দোকানে শ্রোতারা মেতেছিলেন আশিকির গানে। এখনো ইউটিউবে বহুশ্রুত এক গান ‘ধীরে ধীরে সে মেরে জিন্দিগি’।
ত্রিশ বছর পর এখন কেমন আছেন, কোথায় আছেন ‘আশিকি’র দুই প্রধান অভিনয়শিল্পী? অনুর আসল নাম অনিতা আগারওয়াল, জন্ম দিল্লিতে। বড় হয়েছেন চেন্নাইয়ে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সোনার মেডেল পাওয়ার পর শখের বশে মডেলিং শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন মোটেও ভালো নেই অনু। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে যায় সম্ভাবনাময় এই মডেলের ক্যারিয়ার।
২৯ দিন কোমায় ছিলেন অনু। বাঁচার কথাই ছিল না! সব ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর চেন্নাইয়ের জীবন, মুম্বাইয়ের ক্যারিয়ার—কিছুই নাকি তখন আর মনে করতে পারছেন না।
চিকিৎসকেরা নাকি বলে দিয়েছিলেন, সর্বোচ্চ তিন বছর বাঁচবেন অনু। একসময় অবশ্য আত্মবিশ্বাস, চিকিৎসা আর যোগব্যায়ামের বদৌলতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন অনু। আবার নিজের পায়ে দাঁড়ান, হাঁটেন। তবে বিনোদনের জগতে আর ফেরা হয়নি। বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, অনুর এখনকার চেহারা দেখলে তাঁকে চেনা যায় না। এখন থাকেন ভারতের বেঙ্গালুরুতে, একাই ছোট্ট এক ফ্ল্যাটে। যোগব্যায়ামের চর্চা করেন নিয়মিত। শিশুদের যোগ শেখান।
তুলনামূলক ভালোই আছেন রাহুল রায়। তাঁর বর্তমান অবস্থা জানার আগে জেনে নিই রাহুলের শুরুটা। দীপক ও ইন্দিরা রায়ের ছেলে রাহুলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। রাহুল পড়তেন হিমাচল প্রদেশের নামী প্রতিষ্ঠান লরেন্স স্কুলে। রাহুলের বিনোদনজগতে আসার কথা ছিল না। রাহুলদের বাড়িতে পরিচালক মহেশ ভাট গিয়েছিলেন সম্পূর্ণ অন্য কারণে। সেখানে রাহুলকে দেখে তাঁর পছন্দ হয়। মহেশের আকস্মিক প্রস্তাবে আশিকি ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন রাহুল।
আশিকির পর বেশ কিছু ছবিতে সুযোগ পান রাহুল। কিন্তু কোনোটাই তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক হয়নি। করেছেন ‘দিলওয়ালে কাভি না হারে’, ‘প্যায়ার কা সায়া’, ‘গজব তামাশা’, ‘ভূকম্প’, ‘গুমরাহ’, ‘গেম’, ‘ফির তেরি কাহানি ইয়াদ আয়ি’, ‘ধর্ম কর্ম’, ‘মেঘা’, ‘নাসিব’, ‘ফির কাভি’, ‘আচানক’-এর মতো কিছু ফ্লপ ছবি। রাহুলের আরও বেশ কয়েকটি ছবির কাজ আটকে যায় মাঝপথে। ‘দিল কা রিশতা’, ‘আয়ুধ’, ‘প্রেমাভিষেক’, ‘তু নে মেরে দিল লে লিয়া’, ‘দিল দিয়া চোরি চোরি’, ‘ফির কাভি’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল। বিভিন্ন কারণে এই ছবিগুলো আর করা হয়নি তাঁর।
ইনস্টাগ্রামে মোটামুটি অ্যাকটিভ রাহুল। সেখান থেকে জানা যায়, টুকটাক বিনোদনজগতের সঙ্গে জড়িত রাহুল। ২০০৫ সালে ‘বিগ বস’-এ প্রতিযোগী হয়েছিলেন রাহুল। ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন এই অভিনেতা।
এরপর বেশ কিছু ছবির প্রস্তাব পান। সেগুলো অবশ্য করা হয়নি। একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছিলেন, ‘স্বেচ্ছায় আমি মিডিয়া থেকে সরে এসেছি। জানি না এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ, না অভিশাপ। কোনো দিনই আমি অভিনেতা বা তারকা হতে চাইনি।’ তবে বহুদিন পর গত বছর আবার ছবিতে কাজ শুরু করেন। নভেম্বরে কারগিলে শুটিং করছিলেন রাহুল রায়। পরিচালক নীতিনকুমার গুপ্তর ছবি ‘এলএসি: লিভ দ্য ব্যাটেল ইন কারগিল’–এর শুটিং চলছিল কারগিলে। গালোয়ান ঘাঁটির সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানানো হচ্ছে ছবিটি।
ছবিতে তিনি মেজরের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। শুটিং চলাকালে রাহুল রায়ের ব্রেন স্ট্রোক করে। সুস্থ হয়ে আবার বিশ্রামে চলে যান এই অভিনেতা। আপাতত বাড়িতে শুয়ে-বসে কাটছে তাঁর জীবন।