ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: নিজের অলিম্পিক পদক বিক্রি করে এক শিশুর চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করলেন তিনি! না, নিজের সন্তান নয়। বাচ্চাটিকে আগে থেকে সেভাবে চিনতেনও না, কিন্তু আট বছরের সেই শিশুর জন্যই নিজের কষ্টের অর্জন অলিম্পিকের পদকটি নিলামে তুলে অর্থ সংগ্রহ করলেন পোলিশ অ্যাথলেট মারিয়া আন্দ্রেজিক।
আন্দ্রেজিক এবারের টোকিও অলিম্পিকে জ্যাভেলিন থ্রোয়ে জিতেছেন রুপা। এই অ্যাথলেটের কাছে অলিম্পিকে জেতা রুপার পদক কেবলই একটা ‘বস্তু’, এর চেয়েও বড় বিষয় তিনি পেয়েছেন হৃদ্রোগে আক্রান্ত ওই শিশুর চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে, সেটি হচ্ছে মনের তৃপ্তি, শিশুটির নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার স্বস্তি। অলিম্পিকের পদক স্যুভেনির হিসেবে বাড়িতে সাজিয়ে রাখলে তিনি এই তৃপ্তি পেতেন না হয়তো, ‘এই অলিম্পিক পদক তো একটা বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এটির ওপর ধুলা না জমিয়ে তা যদি মানবতার কল্যাণে কাজে লাগে, সেটি যদি কাউকে নতুন জীবন দেয়, সেটিই বরং ভালো। আমিও তৃপ্তি পাই, স্বস্তি পাই।’
আন্দ্রেজিকের এ জীবনবোধ তাঁর নিজের জীবন থেকেই পাওয়া। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে মাত্র ২ সেন্টিমিটারের জন্য জ্যাভেলিন থ্রোয়ে পদক জিততে পারেননি। ২০১৮ সালে হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। জীবনটাই হয়েছিল বিপন্ন। সেই ক্যানসার জয় করে তিনি আবারও ট্র্যাকে ফিরেছেন। জয় করেছেন অলিম্পিকের পদকও। জীবনটা যে একটা অলিম্পিকের পদকের চেয়ে অনেক বড়, অলিম্পিকের একটা গৌরব অর্জনেরও অনেক ওপরের জিনিস, আন্দ্রেজিক সেটি খুব ভালো করে জানেন বলেই তিনি আট বছরের শিশু মিলোসজেকের জন্য নিজের সাধের পদকটি বিক্রি করে দিতে এতটুকু দ্বিধায় ভোগেননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিলোসজেকের রোগের কথা জেনেছেন আন্দ্রেজিক। ছোটবেলা থেকেই হৃদ্রোগে ভুগছে সে। বড় ধরনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, সেটি হলেই হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে সে। আট বছরের শিশুটির এ খবর দেখেই আর থাকতে পারেননি তিনি। নিজের ‘অলিম্পিক-অর্জন’ বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিলামে আন্দ্রেজিকের রুপার পদকটি শেষ অবধি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারে।
অলিম্পিক পদককে কেবল একটা ‘বস্তু’ মনে করেন মারিয়া। তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান একটি শিশুর জীবন আর মানবিকতা
অলিম্পিক পদককে কেবল একটা ‘বস্তু’ মনে করেন মারিয়া। তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান একটি শিশুর জীবন আর মানবিকতাছবি: রয়টার্স
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আন্দ্রেজিক লেখেন, ‘মিলোসজেকের হৃদ্রোগের সমস্যাটা খুবই গুরুতর। ওর দ্রুতই অস্ত্রোপচার হওয়া দরকার। আমি ওর সুচিকিৎসার জন্যই আমার অলিম্পিক পদকটি নিলামে বিক্রি করে দিচ্ছি। আশা করি, মিলোসজেকের জন্য একটা দারুণ সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে।’