ক্ষতিকর গেম বন্ধ করা সম্ভব: বিশেষজ্ঞ মত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমসহ লাইকি, বিগোর মতো ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বন্ধের দাবি উঠছে অনেক দিন ধরেই। এ নিয়ে আদালতে রিটও হয়। অবশেষে উচ্চ আদালত ‘ক্ষতিকারক’ অনলাইন গেমের সব ধরনের লিংক বা ইন্টারনেট গেটওয়ে তিন মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলছেন, ক্ষতিকর গেম বন্ধ করা সম্ভব। তবে ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ব্যবহার রোধ করা কঠিন। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতিতে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। ফাঁকফোকর বন্ধ করতে কী করা যায়, তা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।

‘ক্ষতিকারক’ গেম বন্ধের নির্দেশটি এসেছে সোমবার। এদিন এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ার, লাইকি, বিগো লাইভের মতো গেম ও অ্যাপের সব ধরনের লিঙ্ক বা ইন্টারনেট গেটওয়ে নিষিদ্ধ বা অপসারণ বা ব্লক করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

আদালত অনলাইন গেম-অ্যাপ নিয়মিত তদারকি এবং এ বিষয়ে নির্দেশিকা (গাইডলাইন) তৈরি করতে বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল দিয়েছেন। রিটটি দায়ের করা হয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে, গত ২৪ জুন।

‘ক্ষতিকারক’ গেম ও অ্যাপ বন্ধ করা সম্ভব কি না, এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘গেম প্রযুক্তিগতভাবে একটা পর্যায় পর্যন্ত বন্ধ করা যায়। প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশন নির্দিষ্ট কিছু উৎস মেইনটেইন করে। এগুলো যদি চিহ্নিত করে ব্লক করা হয় তাহলে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফেসবুক যেমন বন্ধ করা যায়, তেমনি এগুলোও বন্ধ করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘গেমের সঙ্গে অন্য অ্যাপ্লিকেশনের একটা পার্থক্য আছে। গেম খুব রিয়েল টাইম হতে হয়। গেইমিং সার্ভার থেকে ব্যবহারকারীর দূরত্ব যত কম হবে, পারফরম্যান্স তত ভালো হবে। তখন ভিপিএন দিয়ে খেলা কঠিন।’

ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বন্ধের বিষয়ে সুমন আহমেদ বলেন, ‘স্বাভাবিক ইন্টারনেটে এসব অ্যাপ চালানো বন্ধ করা যাবে। কেউ যদি ভিপিএন দিয়ে চালায়, তখন পুরোপুরি বন্ধ করা যায় না। তখন হয়তো ভিপিএন বন্ধের প্রসঙ্গ আসবে। এক ভিপিএন বন্ধ করলে অন্য ভিপিএন আসবে।’

বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক গবেষণা বলছে, দেশে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল গেম খেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিনে দু-তিন ঘণ্টা গেম খেলে কাটানোর প্রবণতা রয়েছে।

দেশে তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্ল্যানস, মাইন ক্র্যাফট, কাউন্টার স্ট্রাইক গ্লোবাল অফেন্স, কল অব ডিউটি ওয়ার জোনের মতো সহিংসতাপূর্ণ গেম। এসব গেমে অস্ত্রের ব্যবহার, মেরে ফেলা ও বোমাবাজি রয়েছে।

সহিংসতাপূর্ণ গেম মানুষের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দুটি গবেষণায় দুই ধরনের ফলাফল দেখা যায়। একটিতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে সহিংসতাপূর্ণ মনোভাব থাকে, তারা এসব গেম খেলে সহিংস আচরণ করতে পারে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, এ ধরনের ভিডিও গেম সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সহিংস আচরণ উসকে দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অনলাইন গেম আসক্তিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

করোনাকালে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইন গেম খেলে কাটানোর বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন। দীর্ঘক্ষণ ডিজিটাল ডিভাইসের পর্দার সামনে থাকলে শিশু-কিশোরদের চোখের নানা সমস্যা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে অনেকে গেম খেলে ও অনলাইনে স্ট্রিমিং করে আয়ও করেন।

উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা সব গেম নয়, ক্ষতিকর গেম ও অ্যাপ বন্ধের পক্ষে। তাঁরা হাইকোর্টের নির্দেশের পর স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা উম্মে কুলসুম বলেন, ‘তিন মাসের জন্য নয়, আদালত যেন পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এসব ক্ষতিকর গেম স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *