ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: জেমস অ্যান্ডারসনের উইকেট পড়তেই জয়ের আনন্দে ছুটতে শুরু করলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দৌড়ে গিয়ে একটা স্টাম্প স্মারক হিসেবে তুলে নিলেন বোলার মোহাম্মদ সিরাজ।
বোলারদের দাপটে লর্ডসে দারুণ এক জয় তুলে নিল ভারত। ইংল্যান্ডকে ১৫১ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয়টি জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বিরাট বাহিনী।
ব্যক্তিগত ২৫ রানে সিরাজের বলে জস বাটলার আউট হতেই ইংল্যান্ডের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। রবিনসনকে তার আগেই ৯ রানে ফেরান জসপ্রিত বুমরাহ।
কেউ কি ভেবেছিলেন ভারত এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে? সোমবার লর্ডসে ম্যাচের পঞ্চম তথা শেষ দিনে ঋষভ পন্থ (১৪) ও ইশান্ত শর্মা (৪) যখন ব্যাট করতে নামছেন, তখন রুটদের জয় দেখতে লর্ডসের গ্যালারিতে ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু মোহম্মদ সামি ও জসপ্রিত বুমরাহ অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে ৮৯ রান (রেকর্ড) যোগ করে এভাবে প্রবল লড়াই ছুড়ে দেবেন, তা কল্পনাতেও ছিল না ইংল্যান্ড বোলারদের।
সামির অপরাজিত ৫৬ কিংবা বুমরাহর অপরাজিত ৩৪ মোটেও পড়ে পাওয়া নয়। শটে ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। জেমস অ্যান্ডারসনের মতো তারকা পেসারের ডেলিভারি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কভার ড্রাইভ মেরেছেন শামি। স্পিনার মঈন আলীকে সামলাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত দেখায়নি বুমরাহকেও। কোহলি যদি আচমকা দ্বিতীয় ইনিংস (২৯৮/৮) ডিক্লেয়ার করে না দিতেন, তাহলে লজ্জা আরও বাড়ত ব্রিটিশদের। যদিও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিল একেবারেই সঠিক। রুটরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার মানসিক প্রস্তুতির সুযোগই পাননি!
ব্যাটিংয়ের মতোই বল হাতেও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন শামি ও বুমরাহ। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারকে খাতা খুলতে দেননি তারা। প্রথম ওভারেই বুমরাহর বলে ররি বার্নস ধরা পড়েন সিরাজের হতে। পরের ওভারেই অনবদ্য ডেলিভারিতে ডম সিবলের উইকেট তুলে নিয়ে সিংহের মতো গর্জন করতে থাকেন সামি। জোড়া ধাক্কায় কেঁপে ওঠে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং।
ঘরের মাঠে তাদের ঘাড়ে চেপে বসে হারের আতঙ্ক। ষষ্ঠ ওভারে সামির দ্বিতীয় ডেলিভারিতে স্লিপে রোহিত শর্মা যদি হামিদের (৪) সহজ ক্যাচ না ফেলতেন, তাহলে আরও চাপে থাকত ইংল্যান্ড। সতীর্থদের দেখে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন বর্ষীয়ান পেসার ইশান্ত শর্মাও। গতি ও স্যুইংয়ের মিশেলে পরাস্ত করেন হামিদকে (৯)। চা পানের বিরতির ঠিক আগে ইংল্যান্ডের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। ইশান্তের বলে লেগ বিফোর হন বেয়ারস্টো (২)। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নেন কোহলি। তাতেই আসে চতুর্থ সাফল্য। এক্ষেত্রে রোহিতের প্রশংসাও করতে হবে। তিনি যদি জোর না করতেন তাহলে হয়তো ভারত অধিনায়ক রিভিউ নিতেন না।
সিরিজের প্রথম থেকেই ভারতের পথের কাঁটা হয়ে উঠেছেন জো রুট। এদিনও তিনি কঠিন সময়ে দলকে ভরসা দিচ্ছিলেন। কিন্তু চা পানের বিরতির পর বুমরাহর বলে প্রথম স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন রুট (৩৩)। ম্যাচের রাশ তখন টিম ইন্ডিয়ার হাতে। ঠিক সেই মুহূর্তে বুমরাহের বলে বাটলারের (২) ক্যাচ ফেলেন কোহলি। যা ভারতীয় বোলারদেরও কিছুটা হতোদ্যম করে।
তবে প্রশংসা করতেই হবে মঈন আলীর। এক প্রান্ত তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করেন। জীবন ফিরে পেয়ে বাটলারও হার বাঁচানোর লড়াই চালান। একটা সময় যখন মনে হচ্ছিল তীরে এসে তরী ডুববে ভারতের, ঠিক তখনই সিরাজ সফল হন পার্টনারশিপ ভাঙতে। ১৩ রানে আউট হন মঈন। পরের বলেই খোঁচা দিয়ে ড্রেসিং-রুমে ফেরেন স্যাম কারান (০)।
দিনের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি ভারতের। রবিনসনের বলে ২২ রানে আউট হন ঋষভ। ১৬ রানে মাঠ ছাড়েন ইশান্ত। তখন ভারতের স্কোর ছিল ৮ উইকেটে ২০৯। সেখান থেকে ম্যাচের রং বদল শুরু সামি-বুমরাহর যুগলবন্দিতে। ছক্কা হাঁকিয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর গোটা লর্ডস অভিনন্দন জানায় সামিকে। ভারতীয় ড্রেসিং-রুমও ভেসে যায় উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে। অতীতেও শামি এমন সাহসী ইনিংস খেলেছেন ঠিকই, তবে লর্ডসের মাটিতে তার এই ব্যাটিং বহুকাল মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব।