নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেরণার উৎস। শেখ ফজিলাতুন নেছার ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, মেধাবী, দূরদর্শী, সাহসী, বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান ইতিবাচক ভূমিকা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক হতে সহায়তা করেছে। তিনি ছিলেন বাঙালির চিরন্তন নারীর প্রতীক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের আদর্শ মায়েদের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। মা, কন্যা, বধূ প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মহিয়সী নারীর ভূমিকা চিরভাস্বর হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী রবিবার রাতে ঢাকায় বঙ্গমাতার জীবনের ওপর লেখা ‘বঙ্গমাতা কুসুমিত ইস্পাত’ বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ৩২ জন বিশিষ্ট লেখকের তথ্যবহুল লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইটির সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হলের প্রভোস্ট ড. জাকিয়া পারভিন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান, কবি নির্মলেন্দু গুণ, বাংলাদেশ নিউজ এর সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং সংগীত শিল্পী অর্পণা খান বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবিস্কার এর সিইও অন্তরা শারমিন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার পর থেকে উত্তাল রাজনীতির দিনগুলিতে শেখ ফজিলাতুন নেছার নেপথ্য ভূমিকা ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিয়ে একটি কুচক্রীমহল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল, তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল বলে উল্লেখ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের প্রাক্কালে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা পরামর্শ ও চাপ উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু যে অমর বক্তৃাটি রেসকোর্স ময়দানে দিয়েছিলেন সেদিনও বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণাদাত্রী ছিলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অনবদ্য অবদান রেখে তিনিও হয়ে উঠেন বঙ্গমাতা। তার মত মহিয়সী নারীর জীবনদর্শন অনুসরণ করার মাধ্যমে নারী উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বঙ্গমাতাকে বাংলাদেশের আদর্শ মায়েদের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও অসীম সাহস নিয়ে জীবনে যে কোনো পরিস্থিতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন।
৭০ এর দশকের শুরুতে স্বাধীনতার প্রাক্কালে মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র হিসেবে তাঁর দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চালচলনকে চিরায়ত বাংলার অতি সাধারণ একজন মানুষের সাথে তুলনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হওয়া সত্ত্বেও নিজ বিভাগের শিক্ষক-সহপাঠীদের অনেকেই জানতেন না তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনিও নিজের পরিচয় কখনো প্রকাশ করতেন না যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এটাই ছিলো সন্তানদের প্রতি বঙ্গমাতার শিক্ষা। ১৪ বছর জেলে কাটানো বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সন্তানদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা অতুলনীয় ছিল।
মা, কন্যা, বধূ- প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মহিয়সী নারীর ভূমিকা চিরভাস্বর হয়ে থাকবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একাত্তরে তার সন্তানরা যুদ্ধে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তিনি অন্তরীণ এই কঠিন অবস্থা সামাল দেওয়া একজন নারীর পক্ষে কী পরিমাণ চ্যালেঞ্জিং তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। তা সত্ত্বেও তিনি দৃঢ় থেকেছেন। তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা নন, তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার প্রেরণাদাত্রী বলে মন্ত্রী তাঁকে আখ্যায়িত করেন। তার নেপথ্য ভূমিকাগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করায় মন্ত্রী লেখক–প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।