ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলার ৭৬তম বার্ষিকী ছিল শুক্রবার। করোনাকালে বড় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালিত হয় দিবসটি। জনগণ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে নীরবতা পালন ও নিহতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জাপানের হিরোশিমা নগরীতে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলার ৭৬তম বার্ষিকী বড় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালন করেছে দেশটি। শুক্রবার হামলার এ বার্ষিকীতে এমনকি টোকিও অলিম্পিকের আয়োজকেরা এক মিনিট নীরবতা পালন করতেও অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে ছিল কিছু হতাশাও। এএফপি ও রয়টার্সের খবর।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের বিভীষিকাময় এই দিনে মার্কিন বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। পরে তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান আরও প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।
বোমা হামলার ওই ক্ষতের স্মৃতি প্রতিবছরই তাড়িয়ে বেড়ায় জাপানকে। তাই তো প্রথম পারমাণবিক হামলার দিনটি শোকাবহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করে তারা। তবে করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মতো এবারও সীমিত পরিসরে এই দিবস পালন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে হিরোশিমায় আয়োজিত এ বছরের প্রধান কর্মসূচিতে অংশ নেন ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা এবং অল্পসংখ্যক বিদেশি অতিথি। হামলায় হতাহত ব্যক্তি ও বিশ্ববাসীর শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
করোনার সংক্রমণের কারণে অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাঁদের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানটি অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়। যাঁরা অংশ নেন তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন কালো পোশাক পরে। মুখে মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে (হিরোশিমায় বোমা হামলার মুহূর্ত) নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে প্রার্থনা শুরু করেন তাঁরা।
হিরোশিমায় হামলার তিন দিন পর জাপানের আরেক শহর নাগাসাকিতে বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে ফেলা হয় আরেকটি পারমাণবিক বোমা। তাতে প্রাণ হারান আরও ৪০ হাজার মানুষ। দুই বোমা হামলার ফলে ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় জাপান।
শুক্রবার হিরোশিমার মেয়র সতর্ক করে বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীকে এ শিক্ষাই দেয়, আত্মরক্ষার জন্য অন্যকে হুমকি প্রদান কারও জন্য সুফল বয়ে আনে না।’
পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ-সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গত বছর থেকে কার্যকর হয়েছে। ৫০টি দেশ এখন পর্যন্ত এ চুক্তি অনুমোদন করেছে। চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর এটিই ছিল হিরোশিমায় ওই বোমা হামলার স্মরণে আয়োজিত প্রথম অনুষ্ঠান। চুক্তিটি কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশই সই করেনি। তবে শান্তিকামী কর্মীরা আশা করছেন, ধীরে ধীরে এ চুক্তির প্রভাব দৃশ্যমান হবে।
এদিকে, হামলার বর্ষপূর্তিতে হিরোশিমায় শুক্রবার দেওয়া এক বক্তব্যে ভুলবশত বক্তব্যের কিছু অংশ এড়িয়ে যান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। পরে অবশ্য এমন ভুলের জন্য ক্ষমা চান তিনি। লিখিত ওই বক্তব্য পাঠ করার সময় পুরো একটি পাতা এড়িয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি সামনে আসে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনএইচকের সম্প্রচার থেকে। সেখানে তাঁর ওই বক্তব্য সম্প্রচারের পাশাপাশি এর সঙ্গে মিলিয়ে লিখিত সাবটাইটেল দেওয়া হচ্ছিল। তবে ইয়োশিহিদে সুগা একটি পাতা এড়িয়ে গেলে সাবটাইটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এমন ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়োশিহিদে সুগা তাঁর বক্তব্যের ভুলের জন্য ক্ষমা চান। এর আগে থেকেই করোনা মহামারির মধ্যে জাপানে অলিম্পিক আয়োজনের জন্য সমালোচকদের চাপে ছিলেন তিনি। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাপানে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির জন্য অলিম্পিক আয়োজন দায়ী—এমনটি মনে করে না সরকার।