প্রচ্ছদ

লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, জীবন বাঁচাতে লকডাউন মেনে চলার বিকল্প নেই। আর যারা জরুরী কাজে বাসার বাইরে যাবেন, তাদেরকেও যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা আরও তীব্র ঝুঁকিতে পড়বে।

দেশে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে অসংখ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়িত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে ঘোষিত নির্দেশনাসমূহ শিথিল করেছিল সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার প্রতিযোগিতা বেশ চোখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী পর্যায়ক্রমে কয়েকদফা লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি। সর্বশেষ সরকার ঘোষিত ২৩ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন চলছে।

স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন না করার কারণেই সারাদেশে কঠোর লকডাউনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। লকডাউনের চতুর্থদিনে রাজধানীর প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে যানবাহন ও মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। নানা অজুহাতে মানুষ বাসার বাইরে বের হচ্ছে। লকডাউনের আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। অর্থাৎ জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও লকডাউন ভাঙার চিত্র বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, জীবন বাঁচাতেই লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপ্রবণ। জীবন বাঁচাতে লকডাউন মেনে চলার বিকল্প নেই। আর যারা জরুরী কাজে বাসার বাইরে যাবেন, তাদেরকেও যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘদিন থাকলে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা তীব্র ঝুঁকিতে পড়বে।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। বিশেষ করে ডেলটা প্রজাতির সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে ও দেশে ইতোমধ্যেই রোগের প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারা দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শাটডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে বলেও বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদু্ল্লাহ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্রাহ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন কখনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিশেষ করে অর্থনৈতিক অবস্থা অসহনীয় হুমকী পড়তে পারে। কিন্তু দেশের মানুষের জীবন রক্ষার্থে লকডাউন ছাড়া সরকারের সামনে অন্য পথ খোলা নেই। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা হলে লকডাউন আরোপ করার প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, দেশে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যু হার কমাতে কোনো ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিথিলতার স্থান রাখার সুযোগ নেই। এখন যদি এসব বিধি-বিধান কঠোরভাবে পালন করা না হয় তাহলে সংক্রমণের হার এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমানো কঠিন হয়ে যাবে। এমনকি পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে বাইরে ঘুরাঘুরি বন্ধ রাখতে হবে। বাইরে বের হলেও অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং অধিক লোকসংখ্যা রয়েছে এমন পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুস্তাক হোসেন ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, লকডাউন পালন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। নিজের ও অন্যদের জীবন বাঁচাতে লকডাউন পালনের বিকল্প নেই। জরুরী কাজে বের হলে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। একজন সদস্য সংক্রমিত হলে পরিবারের সকল সদস্যের জীবন ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েই যায়। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *