নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনা মহামারীর পাশাপাশি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপসর্গ বিবেচনায় এই দু’টি রোগের যেমন কিছু মিল রয়েছে, তেমন ননা দিক দিয়ে রয়েছে ভিন্নতা। করোনা আর ডেঙ্গু একসঙ্গে হলে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। দু’টি রোগই ভাইরাসজনিত এবং উপসর্গের মিল থাকায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও করোনা ভাইরাসের আঘাতে জর্জরিত। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গুর মৌসুম। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীতে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকসমূহ। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশের করোনা চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
করোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গু রোগের মিল-অমিল তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন, বাংলাদেশের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, ডেঙ্গুজ্বর এবং কোভিড১৯- দুটোই ভাইরাস জনিত রোগ হলেও দুটোর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। একই রোগী করোনা এবং ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। দুইটার ক্ষেত্রেই জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি এবং স্বাদ না থাকা হতে পারে। করোনার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের সাথে নাকে ঘ্রাণ পায় না এবং কারো কারো পাতলা পায়খানা হয়। এছাড়া করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট-জনিত সমস্যা হতে পারে, যেটি ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে হয় না বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ। ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চার-পাঁচদিন পরে শরীরে লাল এলার্জির মতো র্যাশ হতে পারে। তখন রক্তে প্ল্যাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে ‘শক সিন্ড্রোম’ হতে পারে যেটি রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়। কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো থাকলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সেগুলোর মধ্যে যদি দেখা যায় যে রোগীর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে অথবা তার কালো পায়খানা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনা ভাইরাস বিভিন্ন লোকের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। আক্রান্ত হওয়া বেশিরভাগ মানুষই হালকা থেকে মাঝারি মানের অসুস্থতা অনুভব করবেন এবং হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও সুস্থ হয়ে উঠবেন।
করোনার সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গসমূহের মধ্যে রয়েছে জ্বর, শুকনা কাশি ও ক্লান্তিভাব।
কম সাধারণ উপসর্গসমূহের মধ্যে রয়েছে ব্যথা ও যন্ত্রণা, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া, মাথা ব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা বা আঙুল বা পায়ের পাতা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
আর গুরুতর উপসর্গসমূহের মধ্যে রয়েছে শ্বাস নিতে অসুবিধা বা প্রবল শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ অনুভব করা, কথা বলার বা হাঁটাচলার শক্তি হারানো।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্রাহ জানান, রোগীর গুরুতর উপসর্গগুলি দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার বা স্বাস্থ্য পরিষেবার কাছে যাওয়ার আগে থেকে সর্বদা কল করে রাখুন। হালকা উপসর্গ ছাড়া এমনিতে সুস্থ অনুভব করছে এমন লোকেদের বাড়িতে থেকে তাদের উপসর্গের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কোনও মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে থাকলে, উপসর্গগুলি প্রকাশ পেতে গড়ে ৫ থেকে ৬ দিন সময় নেয়, তবে এটি ১৪ দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে। পরামর্শের জন্য আপনার স্থানীয় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, দুটি রোগেই চিকিৎসার চাইতে প্রতিরোধ উত্তম। তাই নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে। সামান্য অসাবধানতায় শংকটাপন্ন হয়ে পড়তে পারে জীবন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমউদ্দিন বলেন, ডেঙ্গুতে জ্বর শুরুর পাঁচ–ছয় দিন পর জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। করোনায়ও জ্বরের তিন-চার দিন পর জটিলতা হতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনার সংক্রমণের সঙ্গে ডেঙ্গুও হতে পারে। তবে করোনার সংক্রমণ হলে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলাফল নির্ভুল না–ও আসতে পারে। তাই দু–তিনবার পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে। করোনা আর ডেঙ্গু একসঙ্গে হলে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।