ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: যেন দুর্ভেদ্য এক দেয়াল গড়ে তুলেছিল অস্ট্রিয়া। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অবশেষে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে জালের দেখা পেল ইতালি। খানিক পর আরেকটি। শেষ দিকে ব্যবধান কমিয়ে রোমাঞ্চ ছড়াল প্রথমবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব পেরুনো দলটি। তবে রুখতে পারল না রবের্তো মানচিনির ছোঁয়ায় অজেয় হয়ে ওঠা ইতালিয়ানদের।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে শেষ ষোলোয় ২-১ গোলে জিতে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে ইতালি। তাদের গোলদাতা দুই বদলি খেলোয়াড়। ফেদেরিকো চিয়েসা ডেডলক ভাঙার পর ব্যবধান বাড়ান মাত্তেও পেস্সিনা। অস্ট্রিয়ার একমাত্র গোলটি করেন সাসা কালাজিচ।
দারুণ এই জয়ে ৮২ বছরের পুরনো একটি রেকর্ড ভেঙেছে ইতালি; নিজেদের ইতিহাসে টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ড। এই নিয়ে টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত রইল দলটি। তারা সবশেষ হেরেছিল ২০১৮ সালে, পর্তুগালের বিপক্ষে নেশন্স লিগে। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত সময়ে ৩০ ম্যাচে অপরাজিত থেকে আগের রেকর্ডটি গড়েছিল তারা।
গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে জাল অক্ষত রেখে সাত গোল করা ইতালিকে আটকে রাখতে রক্ষণে হতে হবে জমাট, প্রথমার্ধে সেই পরিকল্পনায় অস্ট্রিয়াকে শতভাগ সফল বলাই যায়।
আক্রমণাত্মক ফুটবলে শুরু থেকে চাপ ধরে রাখলেও নিশ্চিত কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না ইম্মোবিলে-ইনসিনিয়েরা। সপ্তদশ মিনিটে নিকোলো বারেল্লার সামনে সুযোগ একটা এসেছিল বটে; তবে তার শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক বাখমান। হারের তেতো স্বাদ ভুলতে বসা ইতালি প্রথমার্ধে তাদের সেরা সুযোগটি পায় ৩২ মিনিটে। কিন্তু চিরো ইম্মোবিলের ডি-বক্সের মুখ থেকে নেওয়া শট বাধা পায় পোস্টে।
বিরতির আগে গোলের উদ্দেশে তাদের নেওয়া ১২ শটের মাত্র দুটি ছিল লক্ষ্যে, যদিও এই দুটির কোনোটিই প্রতিপক্ষকে তেমন ভাবাতে পারেনি।
প্রথমার্ধ জুড়ে আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত অস্ট্রিয়া ৫৬তম মিনিটে প্রথম একটা হাফ-চান্স পায়। তবে ডাভিড আলাবার ফ্রি কিক ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে যায়। ৬৫তম মিনিটে ইতালিকে হতবাক করে দিয়ে হেডে জালে বল পাঠান মার্কো আর্নাউতোভিচ। তবে অল্পের জন্য তিনি অফসাইডে থাকায় বেঁচে যায় ১৯৬৮ আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
খানিক পর আবারও ইতালির ডি-বক্সে উত্তেজনা ছড়ায়। এবার মাত্তেও পেস্সিনার বাধায় স্টেফান লাইনার পড়ে গেলে পেনাল্টির জোরালো আবেদন করে অস্ট্রিয়ার খেলোয়াড়রা। তবে ভিএআরে দেখা যায়, তার আগেই অফসাইডে ছিলেন ডিফেন্ডার লাইনার।
গ্রুপ পর্বের দুর্দান্ত ইতালিকে দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। আক্রমণের ধার বাড়াতে নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে জোড়া পরিবর্তন করেন মানচিনি। ইম্মোবিলে ও দমিনিকো বেরার্দিকে তুলে নামান আন্দ্রেয়া বেলোত্তি ও চিয়েসাকে।
অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে দলকে এগিয়ে নেন চিয়েসা। বাঁ দিক থেকে স্পিনসোলার ক্রস ছয় গজ বক্সের ডান দিকে পেয়ে হেডে নামিয়ে ডান পায়ের ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোলটি করেন ইউভেন্তুস ফরোয়ার্ড। ১০ মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পেস্সিনা। ডি-বক্সে বেলোত্তি দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন, তারই ফাঁকে বল পেয়ে ছয় গজ বক্সে ঢুকে জোরালো কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন আতালান্তার এই মিডফিল্ডার।
টুর্নামেন্টে যার এখানে খেলারই কথা ছিল না, সেই পেস্সিনার আসরে হয়ে গেল দুই গোল। মানচিনির প্রথম ঘোষিত দলে ছিলেন না তিনি, পরে মিডফিল্ডার স্তেফানো সেন্সির চোটে ডাক পড়ে ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলারের। গ্রুপ পর্বে তৃতীয় ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন তিনি।
১১৪তম মিনিটে কর্নারে দুরূহ কোণ থেকে নিচু হয়ে হেডে স্কোরলাইন ২-১ করেন কালাজিচ। ইতালির জালে ১১৬৮ মিনিট পর এই প্রথম গোল হলো।
সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পর্তুগাল ও বেলজিয়ামের মধ্যে বিজয়ীর মুখোমুখি হবে ইতালি।