নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের প্রায় ৬৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের দুটি টিউবের একটির খনন কাজ শেষ। সেখানে চলছে রাস্তার নির্মাণ কাজ। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রকৌশলীরা। করোনা সংক্রমণ আর জমি অধিগ্রহণ— কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের নির্মাণকাজের শুরুতে এই দুটি ছিল বড় প্রতিবন্ধকতা। ইতিমধ্যে দুটি প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। এখন কাজ চলছে পুরোদমে। কাজের এই ধারা অব্যাহত থাকলে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে স্বপ্নের টানেলের নির্মাণ কাজ। এরপরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে টানেল। এমনই আশাবাদ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের।
দেশে প্রথমবারের মতো নির্মাণাধীন এই টানেলের চট্টগ্রাম নগর প্রান্ত শুরু হয়েছে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমির পাশ থেকে। এই প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া প্রথম টিউবের খননকাজ গত বছরের ২ আগস্ট শেষ হয়েছে। নদীর আনোয়ারা প্রান্ত থেকে টিউবের খনন কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। টানেল নগর প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল সীমানার মাঝখান দিয়ে উঠে কর্ণফুলী-আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ ঘটাবে। টানেলের মাধ্যমে চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
দেশে প্রথমবারের মতো কোনো নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন এই টানেলের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এতে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। টানেল নির্মিত হলে দেশের জিডিপি শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, নির্মাণকাজ শুরুর আগে-পরে করোনা মহামারি ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। এখন আর তা নেই। তাই আশা করা যাচ্ছে, টানেল আগামী দেড় বছরের মধ্যে যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযুক্ত সড়ক থাকবে। আর রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভারব্রিজ।
২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে নির্বাচনী সমাবেশে এই টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মযজ্ঞ চলছে টানেলকে ঘিরে। এই টানেলের বহুমুখী সুবিধা নেওয়ার অপেক্ষায় এখন সবাই। আর টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে।
টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর নগরে প্রবেশ করতে হবে না। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এর ফলে চট্টগ্রাম নগরেও যানবাহনের চাপ কমে যাবে।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে ভারতীয় কংগ্রেস
- আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির চিঠি