সংস্কৃতি

মঞ্চসারথি আতাউর রহমান স্বপ্ন দেখেন শেক্সপিয়ারের ‘কিং লিয়ার’ এর ভূমিকায় অভিনয়ের

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: নাট্যদল ‘আরশিনগর ঢাকা’র বিশেষ আয়োজন “পঞ্চবাণ”। এই আয়োজনে বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিশিষ্ট নাট্যজন, নির্দেশক, অভিনেতাগণ। পঞ্চবাণ-এর ৫০তম পর্বে শুক্রবার হাজির হয়েছিলেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান।
ধূমকেতু ডটকম ডটবিডি’র পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
মঞ্চসারথি আতাউর রহমান- নাট্যকলার ক্ষেত্রে দেশের সুপরিচিত এক নাম। জন্ম ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস.সি পাস করেছিলেন ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। বিগত ৫৫ বছর যাবত মঞ্চনাটকের সাথে অভিনেতা, নির্দেশক এবং সংগঠক হিসেবে তিনি নিবিড়ভাবে জড়িত। বাংলাদেশের থিয়েটার জগত নাট্য কৃতির জন্য তাঁকে মঞ্চসারথি উপাধিতে ভূষিত করেছে।
টেলিভিশন নাটকের ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা উল্লেখযোগ্য। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪টি। তিনি দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকীতে নিয়মিত কলাম ও প্রবন্ধ লিখে থাকেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে আতাউর রহমান নির্দেশিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রথম মঞ্চনাটক।
তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নির্দেশিত নাটক মাইলপোস্ট, সাজাহান, গডোর প্রতীক্ষায়, গ্যালিলিও, ঈর্ষা, রক্তকরবী, ত্রয়লাস ক্রেসিদা, অপেক্ষমান, বাংলার মাটি বাংলার জল, রুদ্ররবি ও জালিওয়ানালাবাগ, নারীগণ ও হ্যামলেট। নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা ৩৬ টি। মঞ্চে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রায় ২০০০ রজনী।
নাট্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি একাধিক বিদেশি নাটকের বাংলা অনুবাদ ও রূপান্তর করেছেন। নাট্যকলায় অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননাসহ লাভ করেছেন দেশের দ্বিতীয় স্বীকৃতি একুশে পদক ও সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বাধীনতা পুরষ্কার। তিনি বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো, প্রাক্তন সভাপতি আই.টি.আই (বাংলাদেশ) ও চেয়ারম্যান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। নাটকের ক্ষেত্রে আজও সক্রিয় রয়েছেন।

১. আমার দেখা প্রথম মঞ্চনাটক।
চট্টগ্রামে আমার বাবার নির্দেশিত শচীন সেনগুপ্তের ‘সিরাজদৌল্লা’ নাট্য প্রযোজনাটি, ওটা ছিল তাঁর অফিসের ক্লাবের নাটক। বাবা নিজে ওয়াটসনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।


২. যে নাটকটি চোখে লেগে আছে।
সেলিম আল দীনের ‘কিত্তনখোলা’।


৩. যে চরিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে দিনযাপন করি।
এই পরিণত বয়সে শেক্সপিয়ারের ‘কিং লিয়ার’ এর ভূমিকায় অভিনয় করার স্বপ্ন লালন করি।

৪. যে নাটকটি নির্দেশনা দিয়ে বিপুল আনন্দ পেয়েছি।
স্যামুয়েল বেকেটের জাতীয় অধ্যাপক অনূদিত ‘গডোর প্রতীক্ষায়’; মূল ‘ওয়েটিং ফর গডো’।

৫. মঞ্চের স্মরণীয় ঘটনা।

সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘ঈর্ষা’ নাটকটি কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস মঞ্চে অভিনয়কালে একটি ঘটনা ঘটেছিল। নাটকটি দেখতে এসেছিলেন কিংবদন্তীসম অভিনেতা ও নির্দেশক প্রয়াত শ্রী শম্ভু মিত্র। নাটকটির নির্দেশক ছিলাম আমি। নাটক শেষে নির্দেশনার বিশেষ মুহূর্ত তিনি পছন্দ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। যখন ‘যুবক’ চরিত্র (খালেদ খান) বলছে- দেশে ফিরে এসে দেখলাম জাতির পিতার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে স্বদেশ। আমার নির্দেশনা ছিল; পেছনের সাইক্লোরামা লাল রংয়ে আচ্ছাদিত হবে। আমাদের লাইট ডিজাইনার ছিল নাসিরুল হক খোকন। নতুন জায়গায়, নতুন যন্ত্রপাতিতে সে ভুল সুইচ টিপে দিয়েছিল; তখন মঞ্চ অন্ধকারে নিমজ্জিত হল। আবার একটু পরেই আলো জ্বলে উঠল। শ্রী শম্ভু মিত্রের কাছে এই ভুলটিই ‘স্ট্রোক অব জিনিয়াস’ বা অসাধারণ মনে হয়েছিল।
গ্রন্থনা: সুমন কুমার। সৌজন্যে: আরশিনগর ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *