মাতৃভূমি

জন্মভূমিকে কেন ভালোবাসি -সিন্টু দাস কল্যাণ

সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় সুপ্রিয় পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি “জন্মভূমিকে কেন ভালোবাসি” শিরোনামে সৃজনশীল লেখা আহ্বান করেছেন ধূমকেতু বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক খোকন কুমার রায়। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই লেখা পাঠিয়েছেন। তাদের লেখাগুলো পর্যায়ক্রমে ছাপা হচ্ছে।

জন্মভূমিকে কেন ভালোবাসি

সিন্টু দাস কল্যাণ

মা আমার অস্তিত্বের সহযাত্রী। মায়ের গর্ভে আমার উৎপত্তি ও বিকাশ। তাই প্রথমে জন্মভূমিটা ছিল মাতৃভূমি। মায়ের পেটে দশমাসের কম-বেশি সময় ছিলাম বোধহীন সত্তায়। মায়ের অস্তিত্বের সাথে সুখে-অসুখে, আনন্দে-বিষাদে, রাগে-অনুরাগে; স্পন্দনের দৃঢ় বন্ধনে! পৃথিবীর কোনো না কোনো অঞ্চলে; মা আমাকে গর্ভধারণ করেছেন, আনন্দে ও কষ্টের তীব্রতায়। সেই অঞ্চলের আলো-বাতাস, জল-মাটি-ছায়ায় মা পথ চলেছেন, মাতৃত্বের মহান পরিণতির দিকে। মায়ের সাথে ছিল আমার জন্মদিন-পূর্ব প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। এই অর্থে আমার জন্মটা মাতৃলোকে বোধহীন সত্তায়।

মায়ের নেয়া আলো-বাতাস, জল-মাটি-ছায়া গ্রহণ করেছি মাতৃলোকে অজান্তে, বোধহীনভাবে। নির্দিষ্ট সময় পার করে মাতৃলোক ছিন্ন করে আসলাম পৃথিবীর এক কোনে জন্মভিটায়, জন্মলোকে। জন্মটা যে ভূমিতে স্থান পেল তা হয়ে গেল জন্মভূমি। মাতৃলোকে যে আলো-বাতাস, জল-মাটি খেয়েছি; সেখানে অভিযোজিত হয়ে গেলাম। মাতৃভূমির খাদ্য, জল, বায়ু ও মাটির সংস্পর্শে মায়ের বুকে উৎপন্ন শ্বেত গঙ্গাধারা পবিত্র দুধ। তা খেয়ে জীবনধারণ, জীবন হতে থাকলো পূত-পবিত্র, শুদ্ধ, শ্বাশত ও পরিপূর্ণ। আস্তে আস্তে শিখলাম জন্মলোকের ভাষা, মায়ের ভাষা। মায়ের সাথে সাথে গেয়ে গেলাম অস্তিত্বের গান।

ভাষা, সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, আচার-আচরণ শিখলাম জন্মভূমির আদলে। ক্রমশ হতে লাগলো জন্মভূমির সংস্পর্শে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। মাতৃলোকের বোধহীন সংস্পর্শ পাচ্ছি, জন্মভূমির আলো-বাতাস, জল-মাটি-ছায়ায়। এই জল, মাটি, আলো, বাতাস হয়ে বোধসত্তার গান। বোধহীন সত্তা আর বোধসত্তা একসাথে গেয়ে যাচ্ছে একই সুরে, একই তানে, একটাই গান….।

ঐকতানের এইগানে যখন জন্মভূমির প্রতি কোনো আঘাত আসে, চিন্তায়-চেতনায় ও সংস্কৃতিতে,তখন কেঁদে উঠে ভেতরের বোধসত্তা। জাগতে থাকতে ক্রমশ অনুভূতির গান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *