ডেস্ক রিপোর্ট: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলীতে চার বাল্কহেড শ্রমিক হত্যা মামলায় দুইজনকে
মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৭ এর
বিচারক মোসাম্মৎ সাবিনা ইয়াসমিন এই আদেশ দেন।
এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেককে নগদ ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং
অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত
ছিলেন ৭ আসামি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাল্কহেডের দুই ফিডারম্যান (ইঞ্জিন মিস্ত্রী) তাজুল ইসলাম ও
মহিউদ্দিন। মামলায় ১২ আসামির মধ্যে চারজন এখনো পলাতক রয়েছেন এবং একজন
ইতিপূর্বে মারা গেছেন। রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসামিদের স্বজনরা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জানান, ‘২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর
শাহপরাণ নামে একটি বাল্কহেড সিলেট থেকে পাথর বোঝাই করে মুন্সীগঞ্জের একটি সিমেন্ট
কারখানায় যায়। সেখানে পাথর খালাস করে ২১ সেপ্টেম্বর বাল্কহেডটি ফেরার পথে
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে থেমে যায়। পরে
বাল্কহেডটি মেরামত করার জন্য চালক দুই ফিডারম্যান তাজুল ইসলাম ও মহিউদ্দিনকে ফোন
করে ডেকে আনেন। মেরামত শেষে বাল্কহেডটি সচল হলে দুই ফিডারম্যান সেটি পরীক্ষা করার
কথা বলে রাতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাতদের যোগসাজশে বক্তাবলীর চরে নিয়ে থামিয়ে
দেয়। ওইদিন রাতের কোন এক সময় দুই ফিডারম্যান সহযোগিদের সাথে নিয়ে চালক নাসির
মিয়া, কর্মচারী মঙ্গল, ফয়সাল ও হান্নানকে হাত পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করে লাশ নদীতে
ফেলে দেয়। পরে মেঘনা নদী থেকে হাত পা বাঁধা ও গলাকাটা অবস্থায় নাসির এবং মঙ্গলের
লাশ উদ্ধার হলেও ফয়সাল ও হান্নান নামের অপর দুই শ্রমিক নিখোঁজ থাকেন। পরে
বাল্কহেডটি বক্তাবলীর চর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশ জব্দ করে।’
তিনি জানান, ‘ঘটনার পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর বাল্কহেডটির মালিক এরশাদ মিয়া ফতুল্লা থানায়
বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুই ফিডারম্যান তাজুল ইসলাম ও
মহিউদ্দিনসহ সাত আসামিকে গ্রেফতার করে। পরে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে ও দায়
স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক
বদরুল আলম আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ ১২ জনকে আসামি
করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত যুক্তিতর্ক ও ১৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য
প্রমাণের ভিত্তিতে এই রায় প্রদান করেন।’