প্রচ্ছদ

ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন মাসে কিছু কমেছে

ধূমকেতু রিপোর্ট : ব্যাংক খাতে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। তিন মাস আগের তুলনায় গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের যা ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। তিন মাস আগে সেপ্টেম্বরে ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঋণ ছিল খেলাপি। অবশ্য এক বছর আগের বা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।

অবলোপন যোগ করলে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় এক লাখ ৩৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সাধারণভাবে অন্যসব প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বাড়লেও ডিসেম্বর শেষে কমতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাস আগের তুলনায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমলেও জনতা ব্যাংকের প্রভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগে যা ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা ছিল।

এক বছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় তিনগুণ বেড়ে ১৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা হয়েছে। ক্রিসেন্ট লেদার, অ্যাননটেক্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নানা অনিয়ম করে ঋণ দিয়ে আলোচিত ব্যাংকটিতে তিন মাস আগে খেলাপি ঋণ ছিল ১৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এক বছর আগে ছিল পাঁচ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে ১১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা হয়েছে। বেসিক ব্যাংকে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণীতে রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৩ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকে চার হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমে ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা হয়েছে। তিন মাস আগে বেসরকারি ব্যাংকের ৪৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা ছিল খেলাপি।

ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে ছিল দুই হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমে চার হাজার ৭৮৮ কোটি টাকায় নেমেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল পাঁচ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা।

মতামত জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ কমানোর ওপর জোর দিতে হবে। আর এ জন্য সর্বপ্রথম ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।

এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের পরিচালক বা আত্মীয়-স্বজনকে ঋণ পাইয়ে দেন। পরিশোধের প্রত্যাশা ছাড়াই এসব ঋণ দেওয়া-নেওয়া হয়। আবার রাজনৈতিক প্রভাবে দেওয়া ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে আদায়ে নমনীয়তা দেখানো হয়।

এ প্রবণতা থেকে বেরোতে হবে। একই সঙ্গে বড়-বড় ঋণ গ্রহীতা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে খেলাপি দেখানো থেকে বিরত থাকছেন। এ অবস্থার উন্নতি করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। আদায় বাদে ডিসেম্বর শেষে অবলোপনকৃত ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যা ছিল ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৩৬ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অবলোপনের ঋণ বিবেচনায় নিলে ব্যাংক খাতের ঋণের মোট ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ খেলাপি।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট লাখ ৬৮ হাজার সাত কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে অবলোপনসহ খেলাপি ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *