স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ৩টি ধরন সক্রিয় ডব্লিউএইচও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মূলে রয়েছে তিনটি ধরন বা টাইপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ঘটাচ্ছে মূলত ‘জি’ ধরনের করোনাভাইরাস। এছাড়া অন্য আরো দুটি ধরন হচ্ছে ‘জিএইচ’ ও ‘জিআর’। এগুলোর সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অনেক বেশি কি না, তার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু হবে এমন কোনো প্রমাণও পায়নি বিজ্ঞানীরা। করোনা ভাইরাসের জিনের কাঠামো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানতে পেরেছেন।

করোনা ভাইরাসের পরিবর্তনের ধরনকে চিহ্নিত করার জন্য এল, এস, ডি, ভি, জি এ রকম নানা ভাগে ভাগ করেছেন অণুজীববিজ্ঞানীরা। ভাইরাসের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য জানা-বোঝার জন্য এই তথ্য জরুরি।

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে এ পর্যন্ত পূর্ণ জিনকাঠামো বিশ্লেষণ হয়েছে ২৮৮টি। দেশে করোনার প্রথম পূর্ণ জিনকাঠামো বিশ্লেষণ হয়েছিল বেসরকারি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ল্যাবরেটরিতে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অধ্যাপক সমীর সাহা।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে জি ধরনের বা জি ক্লেডের ভাইরাসের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। মাত্র সাতটি ক্ষেত্রে ডি ধরন পাওয়া গেছে। এই সাতটি পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম এলাকার ল্যাবরেটরিতে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার জিনকাঠামো বিশ্লেষণের তথ্য নিয়মিতভাবে জমা দিচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেমে (জিআইএসআরএস)। ৪ আগস্ট পর্যন্ত এই দপ্তরে ৬৯ হাজার ৬৫৫টি পূর্ণ জিনকাঠামো বিশ্লেষণের তথ্য জমা পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন দেশে করোনাভাইরাসের কোন ধরনটি বেশি সক্রিয়, তারও তালিকা প্রকাশ করছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে জি, জিএইচ এবং জিআর ধরনের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কোন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ইতালির বোলোগ্না বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন গবেষক।

তারা বলছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের আদি ভাইরাসটি ছিল ‘এল’ ধরনের। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে জি ধরনের করোনা ভাইরাস। এরপর এই ভাইরাসের পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর নানা ধরন বা ক্লেড বা স্ট্রেইন দেখা গেছে। জি, জিএইচ ও জিআর হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে উত্তর আমেরিকা ও এশিয়াতে। জি, জিএইচ ও জিআর ধরনের ভাইরাসই এখন মূলত বিশ্বের নানা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বলছেন, জি ধরনের ভাইরাসটি সম্ভবত ইউরোপ থেকেই এসেছিল। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ডি ধরনের ভাইরাসের উৎস ছিল সম্ভবত চীন। ডেনিয়েল মার্সেটালি ও ফেডেরিকো জর্জিনামের গবেষকদের ওই বিশ্লেষণ বিজ্ঞান সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার্স ইন মাইক্রোবায়োলজিতে ছাপা হয়েছে।

৪৮ হাজার ৬৩৫টি জিনকাঠামোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ, ভারত, কঙ্গো ও কাজাখস্তানে ভাইরাসের পরিবর্তন বা মিউটেশন বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। সারা বিশ্বে প্রতিটি নমুনায় গড়ে সাতটি মিউটেশন দেখা গেছে। বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে মিউটেশন হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *