নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। এতে পরিবহন ভাড়া ও বিভিন্ন খাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। তেলের এই দাম বাড়ানো নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে।
জুন থেকে টানা পাঁচ মাস জ্বালানি তেল বিক্রিতে লোকসানে থাকার পর বিশ্ববাজারে দাম কমতে শুরু করায় এখন লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতি লিটার ডিজেলে দুই টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। তার পরও এখনো দাম কমানোর কথা ভাবছে না বিপিসি। বিপিসি বলছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত দেশের বাজারে কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমায় এখন দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমা উচিত। তবে যেহেতু এখনো বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামা করছে তাই স্থিতিশীল অবস্থা দেখেই দেশে কমানো উচিত, তা না হলে আবার কয়েক দিন পরেই দাম বাড়াতে বা কমাতে হবে।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস এবং পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছু কমায় বিপিসির লাভ হচ্ছে। বর্তমানে ডিজেলে লিটারপ্রতি দুই টাকার বেশি লাভ হচ্ছে।‘ দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখনো স্থিতিশীল না। তাই স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত দেশের বাজারে কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’
জ্বালানি বিভাগের তথ্য মতে, টানা প্রায় সাত বছরে (২০১৪ জুন থেকে ২০২১ সালের জুন) ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা লাভ করেছে বিপিসি। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় সংস্থাটির দাবি অনুসারে চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জ্বালানি তেল বেচে প্রায় এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। লোকসান কমাতে গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়।
দেশের বাজারে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশেও দাম কমানো হবে।’
এদিকে বাংলাদেশে দাম বাড়ার পরপরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার প্রবণতা দেখা দেয় এবং টানা ছয় সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকে। ৮৪ ডলার থেকে অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৬৬ ডলারে নেমে আসে। এর পরও দেশের বাজারে তেলের দাম কমানো হয়নি।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম কমানোর বিষয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়টি বিপিসি আমাদের (জ্বালানি মন্ত্রণালয়) জানালে অবশ্যই আমরা দাম কমাব।’
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে ২.০৯ ডলার বা ২.৮৯ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭০.২০ ডলার। এর মাধ্যমে সপ্তাহের ব্যবধানে ২.০৫ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে ১০.৪৭ শতাংশ কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামও গত সপ্তাহে কমেছে। ২.৯৭ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭২.৯২ ডলার। এর মাধ্যমে এক মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে ১০.২৪ শতাংশ কম।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের স্থিতিশীল দেখেই দাম বাড়ানো বা কমানো উচিত। কিন্তু তারা দাম বাড়ানোর সময় বিশ্ববাজারের স্থিতিশীলতার যুক্তিটি মানেনি। এখন স্থিতিশীলতা দেখেই দেশে কমানো উচিত, তা না হলে আবার কয়েক দিন পরেই দাম বাড়াতে বা কমাতে হবে।
ম. তামিম বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় যেসব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, এখন দাম কমালেও সেগুলো কমবে না। তাই তেলের দাম কমানোর পর যদি সরকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ভাড়া কমানো নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে আমি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে না। কারণ সরকার দাম কমাবে তো মানুষের সুবিধার জন্যই।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫ লাখ টন। তার মধ্যে ডিজেল ৫০ লাখ টন। ডিজেলের ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে। আর সেচ কাজে ব্যবহৃত হয় ১৬ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬ শতাংশ ডিজেলচালিত কেন্দ্র।
আরো পড়ুন:
৬.৬ শতাংশ হতে পারে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি: আইএমএফ