নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: তারুণ্য প্রেরণা জোগায়, পথ দেখায় নতুন পথের। জীবনের জয়গান তারুণ্যের সুরেই বেজে ওঠে। বাংলাদেশের তরুণরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই; যা গর্বিত করছে দেশকে, অনুপ্রাণিত করছে নতুন প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। তেমনি এক সাফল্য পেয়েছেন বাসিমা ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফোর্বসের ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’তে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের বাসিমা ইসলাম। এতে বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন তিনি। যাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে, এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ফোর্বস প্রতিবছর ২০টি ক্যাটাগরিতে ৩০ জন করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে। এ ক্যাটাগরিগুলোর একটি বিজ্ঞান। সেখানে যে ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে স্থান পাওয়া বাসিমা ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ওয়েস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তিনি কম্পিউটার ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে যোগ দেবেন। ইতোমধ্যে তার ছোট একটি প্রোফাইল প্রকাশ করেছে ফোর্বস। ব্যাটারি ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস তৈরিতে কাজ করছেন বাসিমা। মেধা ও প্রজ্ঞা বাসিমাকে সাফল্যের এ শিখরে পৌঁছে দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাসিমা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পেরিয়ে ভর্তি হন বুয়েটে। তিনি ২০১৬ সালে বুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে চ্যাপেল হিলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে ২০২১ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইস নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি এই স্বীকৃতি পান।
তাকে নিয়ে ফোর্বস ম্যাগাজিন লিখেছে, বাসিমা ইসলাম এমন ডিভাইসের উন্নয়নে কাজ করছেন, যা সৌরশক্তি এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করেই চার্জ দেওয়া যাবে। এ ছাড়া তার এসব ডিভাইস হবে শব্দভেদী। এসব ডিভাইস পথচারীদের নিরাপত্তা দিতে সহায়তা করবে। শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে যানবাহন থেকে পথচারীদের নিরাপদ রাখবে। এমন সব চমৎকার কাজের জন্য ফোর্বস ম্যাগাজিন বাসিমাকে বেছে নিয়েছে। এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ফোর্বস ম্যাগাজিনে। তার ইন্টারডিসিপ্লিনারি গবেষণার বিষয়বস্তু বহুমুখী। এর মধ্যে আছে মেশিন লার্নিং, মোবাইল কম্পিউটিং, অ্যাম্বেডেড সিস্টেমস এবং ইউনিকুইটাস কম্পিউটিং। আইওটি ডিভাইসগুলো প্রচলিত ডিভাইসের চেয়ে খানিকটা আলাদা। এগুলো ওয়্যারলেস সিগন্যাল ও সংযোগের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। রিমোট সেনসিং, উপস্থিতি শনাক্তকরণ, কোনো বস্তু কিংবা অবস্তুগত সত্তার ব্যাপারে ব্যবহারকারীকে অবহিতকরণই মূলত আইওটি ডিভাইসগুলোর কাজ।
বাসিমার হাত ধরে সাফল্য ধরা দিয়েছে আরও আগে থেকেই। যার শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে মাইক্রোসফট এমাজিন কাপ দিয়ে। জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাসিমা মাইক্রোসফট এমাজিন কাপে হয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে তিনি এন্টু উইমেন ইয়াং রিসার্চার ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড মবিসিস এবং নকিয়া বেল ল্যাবস থেকে বেস্ট সামার ইন্টার্ন প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তার অর্জনের ঝুলিতে আরও যোগ হয় একে একে- রানারআপ বেস্ট অ্যাপ অ্যাওয়ার্ড এবং বেস্ট প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড ভিএনসি ২০১৮, ইইসিএস রাইজিং স্টার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি ২০২০।
যে ডিভাইস নিয়ে গবেষণা করেছেন বাসিমা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা এবং সায়েন্সের ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে আমাদের আশপাশে প্রায় এক ট্রিলিয়ন যন্ত্র থাকবে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে থাকবে। এই যন্ত্রগুলো হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত জিনিস। এটি আমাদের একটি কলম হতে পারে, হাতের ঘড়ি হতে পারে কিংবা এটা আমার বাসার দরজাও হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা ব্যবহার করি, সেগুলোর মধ্যে আমরা কম্পিউটিংকে যুক্ত করতে চাই। জীবনের যাত্রাকে গতিশীল-মসৃণ এবং আরও ভালো করার জন্য আমরা এটি যুক্ত করতে চাই। আমাদের এটি আরও সাহায্য করতে পারবে। আমরা এ ধরনের যন্ত্রকে বলি ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি। বেশিরভাগ যন্ত্র ব্যাটারিচালিত। এক ট্রিলিয়ন যন্ত্র যেগুলো ব্যাটারিচালিত; এই ব্যাটারিগুলোকে যদি আমাদের মেইনটেইন করতে হয় যেমন চার্জ করা লাগবে বা পরিবর্তন করা লাগবে তাহলে আমরা হিসাব করে দেখেছি, পুরো বিশ্বে প্রতিদিন ২৭৩ মিলিয়ন ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে। ব্যবহারের পর আমরা এই ব্যাটারি কোথায় ফেলে দিচ্ছি- যা আমাদের পরিবেশের জন্য খারাপ হবে। তাছাড়া রিসাইক্লিং করাও সম্ভব নয়, যেহেতু এটি ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ব্যাটারি রিসাইক্লিং থেকে প্রচুর আগুন ধরে যায়। সে জন্য চিন্তা করলাম ব্যাটারি থেকে কীভাবে এবং কতটা দূরে সরে আসা সম্ভব। এমন কিছু চাইছি যাতে করে সৌরশক্তি বা ওয়াইফাই থেকে অথবা আমরা যে হাঁটাচলা করি সে সময় আমরা যে শক্তি তৈরি করে থাকি এগুলোকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যন্ত্রগুলোকে চার্জ করার জন্য।’
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় স্থান পেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাসিমা বলেন, ‘খুবই ভালো লেগেছে। আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না ঠিক কেমন লেগেছে। আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করেছি। এই স্বীকৃতি আমাকে আরও কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
আরো পড়ুন: