নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় নির্বাচনের দিনটি উৎসবের মতোই পালন করা হয়। আবার কখনো কখনো এই উৎসব শোকে রূপান্তর হয়ে যায়। ঠিক এমনি একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিটোব গ্রামটি।

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সহিংসতার ঘটনায় বিজিবির ছোড়া গুলিতে ঘিটোব কেন্দ্র এলাকায় তিনজনের মৃত্যু হয়। সে থেকেই গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এর মাঝে শোক সামলে উঠার আগেই পুলিশের করা মামলার কারণে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) ঘিটোব গ্রামের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনের নামে অজ্ঞাতনামা একটি সহিংসতার মামলা করেছে পুলিশ। পীরগঞ্জ থানায় করা এই মামলার কারণেই গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ঘিটোব গ্রামের পুরুষেরা। এতে করে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।

মামলা হওয়ার পর সনগাও ইউনিয়নের ঘিটোব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘিটোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে গুলিবিদ্ধের ছিদ্র ও যেখানে সেখানে রক্তের চিহ্ন। যা আগের রাতের সহিংসতার পরিমাণ বর্ণনা করে দিচ্ছে। এই স্কুলটি এবার ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশ। কেউ কান্না করতে চাইলেও হয়তো শব্দের ভয়ে চেপে রেখেছে। অপরিচিত মানুষ দেখলেই ভয়ে সরে যেতে চাইছে। এছাড়াও গ্রাম ঘুরে কিছু ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ছাড়া আর কোনো পুরুষ মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, ঘিটোব শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম ছিলো। কিন্তু ভোটের সঠিক ফলাফলের দাবি করাই আমাদের হয়তো ভুল হয়েছে। আমরা সংঘাত চাইনি। তবুও এই নির্বাচনটি আমাদের জন্যে দুঃস্বপ্নের মত এসেছে।

এই নারী জানান, পুলিশ বিজিবির গুলি বর্ষণের পরেই অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকে সম্পূর্ণ গ্রাম ভয়ে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। আমরা নারীরাও ভয় পাচ্ছি। আমরাও নিজেদের নিয়ে আটকের শঙ্কায় আছি। তবে বাড়ি ভিটার মায়ায় যেতে পারিনি।

এই বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, থানা পুলিশ বাদী হয়ে ৬০০/৭০০ জনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন:

চলনবিলে চলছে বাউৎ উৎসব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *