ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: তারকা থেকে শুরু করে পরিচিত মহল, কান পাতলেই আজকাল এদিক-সেদিক থেকে ভেসে আসে সম্পর্কচ্ছেদের খবর। অথচ দুই-তিন যুগ আগেও পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সময়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের হার যেন ক্রমেই বাড়ছে। শুনতে অবাক লাগবে, মানুষের সেই স্বভাব এখন পাখিদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সামুদ্রিক পাখি আলবাট্রসদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার অনেক বেড়ে গেছে। অথচ মনোগ্যামি, অর্থাৎ এক সঙ্গীকে নিয়ে জীবন পার করে দেওয়া স্বভাবের কারণে এরা ব্যাপক পরিচিত। আলবাট্রসদের প্রেম এত গভীর হওয়ার কারণ জানতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই বিশ্বস্ত পাখিদের মধ্যেও সম্পর্কে ফাটল বাড়ছে। আর তার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন রয়্যাল সোসাইটি। তারা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণ পানির কারণে আলবাট্রসদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বেড়ে গেছে। এমনিতে এ ধরনের পাখিদের মধ্যে ১-৩ শতাংশ বিচ্ছেদের পথে হাঁটতো।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আলবাট্রসদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের হার ৮ শতাংশে চলে গেছে। ১৫ বছর ধরে ফকল্যান্ড দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার পাখির ওপর পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা।
সামুদ্রিক পাখিদের জন্য উষ্ণ পানি মানেই কম মাছ, কম খাবার ও প্রতিকূল পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে তাদের খুব কম বাচ্চাই বাঁচে। বেড়ে যায় পাখিদের স্ট্রেস হরমোন। তারা খাবার জোগাড়ে আরও দূরে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়।
রয়্যাল সোসাইটির গবেষণাপত্রের সহ-রচয়িতা ইউনিভার্সিটি অব লিসবনের গবেষক ফ্রান্সেসকো ভেনচুরা বলেন, উষ্ণ পানির কারণে আলবাট্রসদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বেড়ে যেতে দেখে তারাও অবাক হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাধারণত সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হলে আলবাট্রসদের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। খাবার কম পড়াও এই পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কিন্তু গবেষকরা যখন দেখলেন, তুলনামূলক উষ্ণ পানি পাখিদের সম্পর্কচ্ছেদে বাড়তি প্রভাব ফেলছে, তারা খুবই অবাক হন।
ভেনচুরা জানান, এর পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, উষ্ণ পানি আলবাট্রসদের বহু দূরে শিকারে যেতে বাধ্য করছে। তাতে পাখিগুলো প্রজনন মৌসুমে সময়মতো ফিরতে না পারলে সঙ্গী হয়তো নতুন কাউকে খুঁজে নিচ্ছে। এছাড়া উষ্ণ পানি ও প্রতিকূল পরিবেশে অ্যালবাট্রসদের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। পাখিগুলো তা অনুভব করতে পারে এবং এজন্য হয়তো সঙ্গীকেই দায়ী করছে।
আরো পড়ুন: