খাদ্য-পুষ্টি

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা বেড়েছে

নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে  দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা বেড়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গুণগত মানের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি সচেতনতাও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশের মতো  বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এই সচেতনতা বেড়েছে। বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা ছিল যথাক্রমে  ১৪৪ দশমিক ৮১ লাখ  মেট্রিক টন, ৬৯ দশমিক ৫১ লাখ  মেট্রিক টন ও ১৬৫০ দশমিক ৪১ লাখ  মেট্রিক টন। আর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে  যথাক্রমে ১৫২ লাখ  মেট্রিক টন, ৭২ দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিক টন ও  ১৭৩২ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিক টনে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ১০ জনের ভেতর ৭ জন শহরে বসবাস করবেন। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০০৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ বেড়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বেড়েছে কয়েকগুণ হারে। এর প্রেক্ষিতে গত ১০ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দানাদার খাদ্যের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ৬০ ভাগ থেকে দাঁড়িয়েছে ৫৪ ভাগ।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দানাদার খাদ্যের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা আরও কমবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ মাংসের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণ বাড়বে দ্বিগুণ হারে। এর পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের মাত্রা প্রায় স্থির থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জার্নালে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বরাত দিয়ে উদাহরণ হিসাবে বলা হয়, এশিয়া মহাদেশে জনপ্রতি প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে ২২৫ শতাংশ।

১৯৬১ থেকে ২০০৭ সালের সাথে তুলনা করে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রাণিসম্পদের খাতের পণ্যসমূহ খাদ্য হিসাবে দ্রুত গ্রহণ করার কারণে গত চার দশকে মৎস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যসমূহ গ্রহণ সামান্য কমেছে। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের উপরে অতিরিক্ত চাপ বাড়বে। এ চাপ বাড়ার অন্যতম একটি কারণ হলো, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য খাদ্যে অ্যামাইনো এসিডের যে চাহিদা পূর্বে নিরূপণ করেছিল, তা এখন বহুগুণ বেড়ে গেছে। কারণ হিসেবে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রাণিজ আমিষ ওজন কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি কার্যকর শরীর গঠনে সহায়তা করে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০০৬ সালে এক রিপোর্টে দেখিয়েছে, বিশ্বে মাংস এবং দুধ উৎপাদিত পণ্য গ্রহণের মাত্রা বাড়বে যথাক্রমে ১০২ ও ৮২ শতাংশ, ২০০০ থেকে ২০৫০ সালের ব্যবধানে। কিন্তু এসব পণ্যের উৎপাদনের হার উন্নয়নশীল দেশে আরও বেশি থাকবে এবং তা যথাক্রমে হবে ১৬৪ এবং ১৭২ শতাংশ। উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি গত তিন দশকে জনপ্রতি মাংস ও মাংস উৎপাদিত পণ্য গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে ১৫০ ভাগ এবং দুধ ও দুধ উৎপাদিত পণ্যের গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে ৬০ ভাগ। ২০৩০ সাল নাগাদ জনপ্রতি মাংস ও মাংস উৎপাদনের হার বাড়বে আরও ৪৪ ভাগ।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আরও জানিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশসমূহে যেখানে ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে জনপ্রতি বাৎসরিক মাংস গ্রহণ ছিল ২৫.৫০ কেজি। সেখানে ২০৩০ সালে দাঁড়াবে ৩৭ কেজি এবং দুধ ও দুধ উৎপাদিত পণ্য ৪৫ কেজি থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৬৬ কেজি। ডিম গ্রহণের পরিমাণ হবে ৬.৫ কেজি থেকে ৮.৯ কেজি। এটা তো হলো উন্নয়নশীল দেশসমূহের চিত্র। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি অভিক্ষেপণ করেছে। এগুলো হবে মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশসমূহ আদর্শ জীবন ব্যবস্থার প্রতি সচেতন হওয়ার কারণ।

বাংলাদেশে দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা ও সরবরাহ:

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর জানায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুধ , মাংস ও ডিমের চাহিদা ছিল যথাক্রমে ১৫২ লাখ  মেট্রিক টন, ৭২ দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিক টন ও  ১৭৩২ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে  দুধ ১৫২  মেট্রিক টন, মাংস ৭২ দশমিক ৯৭ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৭৩২ দশমিক ৬৪ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুধ ১৫০ দশমিক ২৯ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৭২ দশমিক ১৪ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৭১২ দশমিক ৮৮ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুধ ১৪৮ দশমিক ৪৫ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৭১ দশমিক ৩৫ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৭১২ দশমিক ৮৮ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুধ  ১৪৬ দশমিক ৯১ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৭০ দশমিক ৫২  লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৬৭৪ দশমিক ৪০ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দুধ ১৪৪ দশমিক ৮১ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৬৯ দশমিক ৫১ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৬৫০ দশমিক ৪১ লাখ  মেট্রিক টন।

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর আরো জানায় চাহিদার বিপরীতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুধ , মাংস ও ডিমের সরবরাহ ছিল যথাক্রমে  ১০৬ দশমিক ৮০ লাখ  মেট্রিক টন,  ৭৬ দশমিক ৭৪ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৭৩৬ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুধ  ৯৯ দশমিক ২৩ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস  ৭৫ দশমিক ১৪ লাখ  মেট্রিক টন  ও ডিম ১৭১১ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুধ ৯৪ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৭২ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৫৫২ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুধ ৯২ দশমিক ৮৩ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৭১ দশমিক ৫৪ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১৪৯৩ দশমিক ৩১ লাখ  মেট্রিক টন।

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুধ ৭২ দশমিক ৭৫ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৬১ দশমিক ৫২ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১১৯১ দশমিক ২৪ লাখ  মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দুধ ৬৯ দশমিক ৭০ লাখ  মেট্রিক টন, মাংস ৫৮ দশমিক ৬০ লাখ  মেট্রিক টন ও ডিম ১০৯৯ দশমিক ৫২ লাখ  মেট্রিক টন।

আরো পড়ুন:

কৃষির উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *