কৃষি-মৎস্য

হালদা নদীর গাঙ্গেয় ডলফিনসহ চার প্রজাতির মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: হালদা নদীর কার্প বা রুইজাতীয় চার প্রজাতির মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিনের জীবনরহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্স) করেছেন বাংলাদেশের একদল গবেষক। দেশের কার্প জাতীয় মাছের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই নদীর রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ যেমন দ্রুত বাড়ে, স্বাদেও তেমনি অতুলনীয়। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে এই মাছগুলোর ‘বিশেষত্বের’ দিকগুলো জানা সম্ভব হবে। গাঙ্গেয় ডলফিনসহ মৃগেল ও কালবাউশের জীবনরহস্য উন্মোচন এটাই প্রথম।

এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এম জে জোনায়েদ সিদ্দিকী।

বিশ্বের জিনোম সিকোয়েন্সবিষয়ক তথ্যভান্ডার হিসেবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এনসিবিআইতে (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এ গবেষণার ফল জমা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশও করা হয়েছে। এর ফলে অন্য দেশের রুইজাতীয় মাছ ও ডলফিনের সঙ্গে হালদার এসব মাছের তুলনা করা যাবে। এসব জলজ প্রাণীর নানা বৈশিষ্ট্য জানা যাবে।

এর আগে ভারতের গঙ্গা নদীর রুই ও কাতলার জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন দেশটির গবেষকেরা। আর যুক্তরাষ্ট্র উন্মোচন করেছে আটলান্টিক মহাসাগরের ডলফিনের জীবনরহস্য।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের অন্যান্য নদীর রুইজাতীয় মাছের চেয়ে হালদার মাছ দ্বিগুণেরও বেশি হারে বাড়ে, বড়ও হয় খুব তাড়াতাড়ি। হালদার মাছের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। যে কারণে এখানকার মাছের পোনার দাম দেশের অন্যান্য রুইজাতীয় মাছের পোনার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। কিন্তু হালদা নদীতে রুইজাতীয় মাছ কেন এত ডিম পাড়ে, আর সেখানকার রুই কেন এত দ্রুত বড় হয়, এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল।

অন্যদিকে হালদা নদীর সঙ্গে গঙ্গার কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। এরপরও সেখানে কী করে গাঙ্গেয় ডলফিন এল, এর বৈশিষ্ট্য কী, এটি কি গঙ্গা নদীর ডলফিনের একটি উপ-প্রজাতি, নাকি স্বতন্ত্র গুণাবলি নিয়ে আলাদা প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে, বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে এসব জানার চেষ্টা করছিলেন। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে এসব জানা সহজ হয়ে গেল বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। একই সঙ্গে রুইজাতীয় মাছের আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এ গবেষণা ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করছেন।

এ ব্যাপারে গবেষণা দলের অন্যতম দলনেতা অধ্যাপক এ এম জে জোনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, ‘হালদা পৃথিবীর মধ্যে এক অনন্য নদী। মিষ্টি পানির নদী হওয়া সত্ত্বেও এখানে জোয়ার-ভাটা হয়। এই নদীটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সৃষ্টি হয়ে এখানেই শেষ হয়েছে। আর এখানকার বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার রুইজাতীয় মাছের বৃদ্ধি এবং স্বাদ অন্যান্য নদীর মাছের চেয়ে ভালো। তবে এই মাছগুলো কোন জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে ভালো, এ গবেষণার মাধ্যমে তা আমরা জানার পথে অনেকটা অগ্রসর হলাম।’

প্রায় দুই বছর ধরে চলা এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)। চীনের নর্থ-ওয়েস্ট এএনএফ ইউনিভার্সিটি এবং নিউজিল্যান্ডের টেক্সটজেন ইনফরমেটিকস নামের একটি সংস্থার ল্যাবরেটরির সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে এ গবেষণায়।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া আরেক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদী বাংলাদেশের রুইজাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক ‘জিন ব্যাংক’। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্রগুলোতে ইনব্রিডিংয়ের কারণে মাছের বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাছের বামনত্ব, বিকলাঙ্গতাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ গবেষণা মাছের এসব সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

আরো পড়ুন:

পেঁয়াজ সংরক্ষণে ডাচ প্রযুক্তি কাজে লাগাবে বাংলাদেশ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *