করোনার ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ বাজারজাত শুরু করেছে এসকেএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিশ্বে অনুমোদিত একমাত্র ওষুধ মলনুপিরাভির নিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে বহু প্রতীক্ষার এই ওষুধ বাংলাদেশের বাজারে ছাড়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও এসকেএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন রহমান। করোনা চিকিৎসায় বিশ্বে প্রথম অনুমোদিত ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ। মুখে খাওয়ার এই ওষুধ আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকেই দেশের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে।

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে ৫০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এত দিন অনুমোদিত কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ ছিল না। ৪ নভেম্বর এর চিকিৎসায় ‘মলনুপিরাভির–এর অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, ওষুধটি শরীরের অনেক গভীরে কাজ করে। এটি ভাইরাসের বোঝা কমায়। এতে রোগের তীব্রতা কমে। ওষুধটি নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এটি নিরাপদ ওষুধ। ওষুধটি নিয়ে বিতর্ক কম হবে। এসকেএফের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এত দ্রুততার সঙ্গে ওষুধ আপনারা আনতে পেরেছেন দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। আপনাদের মোবারকবাদ জানাই।’

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এসকেএফ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এসকেএফের ওষুধের ওপর আমার আস্থা আছে। বহু বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের ওষুধ আমি আমার রোগীদের জন্য ব্যবহার করে আসছি।’ ওষুধের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা নিরাময়ের এই ওষুধ রপ্তানি করলে এসকেএফ ও বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে।

মলনুপিরাভির মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল বা বড়ি। সাধারণত ফ্লুর চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হতো। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে করোনা চিকিৎসায় এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গেছে, এই ক্যাপসুল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয়। এই ওষুধের অনুমোদন দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, যেসব ব্যক্তি দুর্বল এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের চিকিৎসায় এই ওষুধ প্রয়োগ হবে যুগান্তকারী।

যুক্তরাজ্য করোনা চিকিৎসায় মলনুপিরাভির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পরপরই বাংলাদেশের বাজারে ওষুধটি আনার উদ্যোগ নেয় এসকেএফসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করে তারা।

আজ দুপুরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এসকেএফ ও বেক্সিমকোকে মলনুপিরাভির ওষুধটি জরুরি ভিত্তিতে বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ওষুধ করোনা চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান এই ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাত করার আবেদন করেছিল। আটটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একজন প্রাপ্তবয়স্ককে সকালে চারটি ও রাতে চারটি ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। এভাবে ৫ দিনে ৪০টি ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। প্রতি ক্যাপসুলের দাম ধরা হয়েছে ৫০ টাকা।

এই ওষুধের গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ ফলাফলে ওষুধটি সেবনে স্বাভাবিক ধরনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন মাথাব্যথা, বমি ও মাথা ঝিমঝিম করার মতো হালকা থেকে মাঝারি ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া মলনুপিরাভির সেবন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

করোনা মোকাবিলায় ‘মলনুপিরাভির’ এসকেএফের একমাত্র ওষুধ নয়। এর আগে গত বছর ব্যাপক করোনা সংক্রমণের সময় ৮ মে এসকেএফ বাজারে এনেছিল জেনেরিক ওষুধ রেমডেসিভির। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) রেমডেসিভিরের জরুরি অনুমোদন দেওয়ার সাত দিনের মাথায় এসকেএফ ওই ওষুধ বাজারে এনেছিল। এসকেএফ বিশ্বের ৪৩টি দেশে ওই ওষুধ রপ্তানি করেছিল।

সেই ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠানে ট্রান্সকম গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন রহমান বলেন, ‘মলনুপিরাভির’ বিশ্বের প্রথম অনুমোদিত করোনার ওষুধ। ৪ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রডাক্টস রেগুলেটরি অথরিটি ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ২০২০ সাল থেকেই এসকেএফের বিজ্ঞানীরা মলনুপিরাভির নিয়ে কাজ করে আসছিলেন। সে কারণে ওষুধটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপগুলো শুধু ব্যবসার জন্য নয়। এসব পদক্ষেপ মানবতা ও মানুষের সেবায় ইতিবাচক প্রভাব রাখে।’

মলনুপিরাভির তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মার্ক ও রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক যৌথভাবে। ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ১৭টি দেশে। মলনুপিরাভিরের কার্যকারিতা যাচাইয়ে দেখা গেছে, যেসব রোগীর চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতি ও আইনের কারণে অন্য দেশ বা কোম্পানির উদ্ভাবিত ওষুধ তৈরি করতে পারে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এই সুবিধা নিয়েই মার্কের ওষুধ তৈরি করছে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *