নিখিল মানখিন, ধূমকেতু ডটকম: প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দুর্যোগ সহনশীল দেশ গড়তে কার্যকর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। জীবনের প্রয়োজনে দুর্যোগ ও এর কারণসমূহ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। ঝুঁকিহ্রাসে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দুর্যোগের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি এবং এর সম্ভাব্য নেতিবাচক ফলাফল বহুগুণে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। আর দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানায়, দুর্যোগ বলতে এমন একটি অবস্থা বুঝায় যা মানুষকে মন্দ বা অকল্যাণকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে। দুর্যোগ বলতে এমন একটি বিপর্যয় বুঝায় যা কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের বেশির ভাগ মানুষকে বিপদাপন্ন করে তোলে এবং উক্ত জনগোষ্ঠীর তা মোকাবেলা করার ক্ষমতা সাধ্যের বাইরে চলে যায়। এসব দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মানুষকে অনেক মূল্য দিতে হয়।
দুর্যোগ কখনো হঠাৎ সংঘটিত হয়, আবার কখনোবা এক বা একাধিক ঘটনা ধীরে ধীরে দুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে। আবার কখনো একটি দুর্যোগ একাধিক দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন-ভূমিকম্প থেকে সুনামি হতে পারে। সুনামি থেকে জলোচ্ছ্বাস এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকায় প্রবল বন্যা ও লবণাক্ততা হতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ :
পৃথিবীব্যাপী যেসকল দুর্যোগ সংঘটিত হয় তা প্রধানত দুই ধরণের- প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।
প্রাকৃতিক কারণে যেসকল দুর্যোগ সংঘটিত হয়, সেগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। এ ধরনের দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে –ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, তুষারপাত, লবণাক্ততা ইত্যাদি।
মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলতে মানুষের অবহেলা, ভুলভ্রান্তি বা কোনো বিশেষ অভিপ্রায়ের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগকে বুঝায়। অর্থাৎ এ ধরনের দুর্য়োগ মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ, রাসায়নিক দূষণ, খাদ্যে কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ :
পৃথিবীর প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রভৃতি কারণে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে আক্রান্ত হয়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। ক্ষয়ক্ষতি হয় সম্পদ ও জীবনের। বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী ঝড় ও টনের্ডো, বন্যা, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, খরা, আর্সেনিক, ভূমিকম্প ও সুনামি ইত্যাদি।
টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদন:
বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা ও প্রস্তুতি নিয়ে ২০২০ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণহানি কমানো, দুর্যোগ মোকাবেলার একটি কাঠামোবদ্ধ মডেল প্রস্তুত করা, এবং তা অনেক দেশ কর্তৃক অনুসরণসহ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও এ খাতে এখনো যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ আছে এবং এখনই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখনো বছরে জাতীয় আয়ের বড় অংশ ক্ষতি হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- বিদ্যমান সতর্কবার্তা প্রদান পদ্ধতি হালনাগাদ করে সাধারণ জনগণের বোধগম্য ভাষায় প্রচার করা; ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে যথাসময়ে পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা প্রদান করা; অধিকতর বিপদাপন্ন পরিবার ও এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনা করা; ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত তথ্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা; আপদকালীন পরিস্থিতি ও দুর্যোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণে দুর্যোগ প্রস্তুতি গ্রহণ করা; নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা সম্বলিত এবং এলাকা ভিত্তিক পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নিশ্চিত করা; আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি, পয়ঃনিস্কাশন ও জরুরি চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তা সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন “অংশগ্রহণমূলক” পদ্ধতিতে দুর্যোগ সহনশীল এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা; প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতাসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপচয় বন্ধে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা; প্রকাশিত অনিয়ম-দুর্নীতির স্বচ্ছ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; দুর্যোগের ফলে বাস্তুচ্যূত পরিবারগুলোর জীবিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নতুন জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা তৈরিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা; ইত্যাদি।
দুর্যোগ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার আহবান রাষ্টপতি ও প্রধানমন্ত্রীর:
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। মঙ্গলবার ওই বাণীতে তারা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ সমাজের সকলকে একসঙ্গে কাজ করা আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার বাস্তবরূপ দিতে দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে সকলকে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এ প্রত্যাশা করি।’
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বব্যাপী পরিলক্ষিত হচ্ছে উল্লেখ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি খাতভিত্তিক প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা প্রদানে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যা মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সঠিক ব্যক্তিকে নগদ সহায়তা পৌঁছানো ইত্যাদি কর্মসূচি দুর্যোগকালীন দুর্ভোগ কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে আধুনিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। কলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগজনিত কারণে জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী হালনাগাদ করা হয়েছে। দুর্যোগকে অন্তর্ভূক্ত করে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকিহ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ কার্যক্রম ও কর্মসূচিতে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের মানুষ যে কোনও দুর্যোগে নিজেদের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সচেষ্ট এবং প্রস্তুত থাকার মনোবল অর্জন করেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি প্রণয়নের পথিকৃৎ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘূর্ণিঝড় থেকে জানমাল রক্ষায় ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। স্বেচ্ছাসেবকদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবে ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘সিপিপি’- এর আওতায় নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবকগণ সমানভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার:
গত ১০ অক্টোবর রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো. এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম আর দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং নতুন নতুন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে আজ সারা বিশ্বের কাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনুকরণীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, ভারি বর্ষণ, শৈত্যপ্রবাহসহ সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোহসীন বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন যারা আগাম সতর্ক সংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজার ২০ জনে উন্নীত হয়েছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের ৫০ শতাংশ নারী। পুরো দেশ জুড়ে আধুনিক আবহাওয়ার রাডার এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থা রয়েছে।
এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের নেতৃত্বে বাংলাদেশ :
দুর্যোগ মোকাবেলায় ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) নেতৃত্ব রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দুই বছর মেয়াদে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাইকো সোশ্যাল সহযোগিতা অন্তর্ভুক্তি। এডিপিসি সদস্য দেশসমূহ হচ্ছে- বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে (রিজিওনাল কনসালটেটিভ) আঞ্চলিক পরামর্শক কমিটিতে রয়েছে আরও ১৬টি দেশ।
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ৫টি ঘূর্ণিঝড়:
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ছিল ১৯৭০ এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়। এরপরে তিনি সাইক্লোন সিডরের কথা উল্লেখ করেন।
শাহ আলম বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর সবোর্চ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রামে আঘাত হানা এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ১০-৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়।
১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড়টি উরিরচরের ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিলোমিটার। এটা অল্প জায়গায় হয়েছে ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল না।
১৯৯১ সালে ১২-২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার। ওই ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেয়া হয় ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে, যাতে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় বলে জানা যায়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক কোটি মানুষ।
২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতার প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার। সিডরে রেডক্রসের হিসেবে ১০ হাজার লোক মারা গেছে বলা হলেও সরকারিভাবে ৬ হাজার বলা হয়েছিল।
২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ‘৭০ এবং ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম।
আরো পড়ুন: