নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ইন্টারনেট নির্ভরতা যতো বেশি তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল অপরাধ ততো বেশি বাড়ছে। তা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। ডিজিটাল অপরাধ শনাক্ত ও তা দমন করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তিই ব্যবহার করতে হবে, প্রচলিত পদ্ধতিতে ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।
মন্ত্রী বুধবার ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর কম্পিউটার কৌশল বিভাগের উদ্যোগে আইইবি সদর দফতরের কাউন্সিল হলে “নিরাপদ ইন্টারনেট : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আইইবি কম্পিউটার কৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তমিজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং কম্পিউটার কৌশল বিভাগের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় কুমার নাথের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবদুস সবুর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, আইইবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এইচআরডি) ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নূরুজ্জামান এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সাহাব উদ্দিন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু)।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার সাইদ নাসিরুল্লাহ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, আইইবি কম্পিউটার কৌশল বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খান মোহাম্মদ কায়ছার।
মন্ত্রী বলেন, দেশে এখন ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যে খুব সামান্য মানুষ প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা রাখেন। মাত্র কয়েক বছর আগেও ডিজিটাল নিরাপত্তা বলতে কোনও প্রযুক্তি কিংবা অন্য কোনও কৌশল বা সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাইবার থ্রেড ডিটেকশন ও রেসপন্স কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যে ২২ হাজার পর্ণো সাইট এবং ৪ হাজার জুয়ার সাইটসহ আরও সহস্রাধিক আপত্তিকর সাইট বন্ধ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ক্ষতিকর বেশ কিছু গেম বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ক্ষতিকর কন্টেন্ট পৃথিবীর কোনও দেশই বন্ধ করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে আমাদের দৃঢ় প্রচেষ্টায় তাদের সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি করার ফলে আমরা আজ কিছুটা সুফল পাচ্ছি। তারা এক সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের দোহাই দিয়ে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে চাইতো এখন সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে। আমাদের যে কোনও অভিযোগ গুরুত্বের সাথে দেখছে। তাদের প্রতিনিধিরা এখন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে –বৈঠক করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ যথেষ্ট দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাদেরকে আরও বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, সারা দেশে তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং তাদের জন্য প্রযুক্তিগত সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
কম্পিউটারে বাংলা ভাষার জনক মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম দেশ যার নামের আগে ‘ডিজিটাল’ শব্দটি সংযোজিত করে বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করেও বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্পযুগে বা ডিজিটাল যুগে আমরা পৌঁছে গেছি।
করোনাকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সুফল জাতি ভোগ করছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের মধ্যেও ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সেটিকে চারা গাছে রূপান্তর করেছেন এবং গত ১২ বছরে তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের দিকনির্দেশনায় তা আজ এক বিরাট মহীরূহে রূপ নিয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল কানেক্টিভিটি ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যাকবোন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মোবাইল সীম ব্যবহৃত হচ্ছে, শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকা নেটওয়ার্কের আওতায় এবং প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহৃত হতো যা বর্তমানে ২৬ শত ৪৯ জিবিপিএস এ উন্নীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। দেশে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রক্রিয়া চলছে। ভারত ও সৌদি আরবে আমরা ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করছি। ওরা আমাদের কাছ থেকে আরও ব্যান্ডউইডথ নেবে।
প্রতিবেশি ভুটান ও নেপালেও ব্যান্ড উইডথ রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের জন্য গর্বের। তিনি বলেন, চলতি বছরেই আমরা সীমিত পরিসরে ফাইভ-জি চালু করতে যাচ্ছি। দেশের ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিটিসিএল ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে কাজ করছে। টেলিটক ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারিকে অবশ্যই ইন্টারনেট লিটারেসি অর্জন করতে হবে। ইন্টারনেট ভয়াবহ ক্ষতির প্রভাব থেকে কী কী উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করা আবশ্যক মূল প্রবন্ধে বিশদভাবে তা তুলে ধরা হয়।
আরো পড়ুন: