প্রচ্ছদ

নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলার ইতিহাস জানাচ্ছে যে ভাস্কর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বঙ্গবন্ধু ও বাংলার ইতিহাসকে কেন্দ্র করে পাবনার বেড়ায় নির্মিত ‘শেকড় থেকে শিখরে’ ভাস্কর্যটি অতীতের সব ভাস্কর্যের চেয়ে অন্যতম বৃহৎ ও ব্যতিক্রম। মূল ভাস্কর্যের এক পাশে ২৬টি কলামের সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এই বেষ্টনীর প্রত্যেকটি কলামে সংক্ষিপ্তাকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে- নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশী প্রান্তরে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পতনের মধ্য দিয়ে বাঙালি যে স্বাধীনতার স্বাধিকার হারায়, তা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বাংলা ও বাঙালির যে আন্দোলন সংগ্রাম, এর ধারবাহিকতায় ইংরেজ আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলার ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ, ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাঁশের কেল্লা বানিয়ে তিতুমীরের বিদ্রোহ ঘোষণা ও আত্মত্যাগ, প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন করে বাংলার কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফরায়েজী আন্দোলনের পুরোধা হাজী শরিয়ত উল্লাহ, মুহম্মদ মহসীন উদ্দীন ওরফে দুদু মিয়া, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কুশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন ভারতের সিপাহী-জনতার বিদ্রোহ, নিল বিদ্রোহ, বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে সুর্য সেন ও ক্ষুদিরামের ভূমিকা, ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন ও সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এর গণহত্যা, স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর শাসনামল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড। এছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির মূলধারায় প্রত্যাবর্তন।

পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মাসেতু-সহ উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানামুখী অগ্রযাত্রা- এ সমস্ত কিছুই সন্নিবেশিত হয়েছে ‘শেকড় থেকে শিখরে’- নামের এই ভাস্কর্যে।

ভাস্কর্যটি পাবনার আমিনপুর থানার নাটিয়াবাড়ির ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চবিদ্যালয় এবং কলেজের পাশে পরিত্যক্ত খাল ভরাটের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে, যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি শিক্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন চত্বর হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

কীর্তিমানদের সচিত্র কথা উল্লেখ থাকায় প্রতিদিন এখানে শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। বিদ্যালয়ের টিফিন সময় আর ছুটির পরে তাদের অন্যতম প্রিয় জায়গা এটি। এখান থেকে তারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানতে পারছে। জানতে পারছে কীর্তিমান মানুষদের সম্পর্কে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে নির্মিত এ ভাস্কর্য ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধারা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন পাবনার বেড়া অঞ্চলের হাজারো মানুষ। অনেকেই শহীদ হন। ইতিহাস মতে, বেড়ার ডাববাগান যুদ্ধই একাত্তরের প্রথম সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধ। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি পূরণে ‘শেকড় থেকে শিখরে’ নামের এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।

উল্লেখ্য, পাবনা-২ আসনের (বেড়া-সুজানগর) সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ২০১৫ সালে এই মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তরুণ শিল্পী বিপ্লব দত্ত প্রায় দেড় বছর নিরলস পরিশ্রমের পর নির্মাণ করেন বহুমাত্রিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ এই ভাস্কর্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *