নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭৩৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটে একজন মেয়র, ৪১ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এবার মেয়র পদের জন্য ৭ জনসহ মোট প্রার্থী ২৩২ জন। ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন।
আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে, এই ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, সুষ্ঠু, প্রতিযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে এই ভোটকে কেন্দ্র করে শঙ্কাবোধে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে ইসি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বলছে, সিটির মোট ভোটকেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে কেন্দ্রের পরিবেশ ঠিক রাখতে মোট ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ভোটকে কেন্দ্র করে সোমবার মধ্যরাত থেকে প্রার্থীরা তাদের টানা দুই সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণা শেষ করেছেন। ৪১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৯ হাজার পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে ২৫ প্লাটুন বিজিবি, ২৫ প্লাটুন র্যাব, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ মোট ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় আছেন ২০ জন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট।
চট্টগ্রাম সিটির এই ভোটে ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ৭৩৫টি কেন্দ্রে নির্বাচনের সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসহ চারটি ভেন্যু থেকে এসব সামগ্রী বিতরণ করে ইসি। এ নির্বাচনে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ভোটার নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’
আজ সকাল ৯টায় বহদ্দারহাট এখলাসুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বাকলিয়া বিএড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ৯টায় ভোট দেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বহিরাগতদের শহরে না আসার আহ্বান জানিয়েছেন মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীর। এ ছাড়া ভোটারদের এনআইডি কার্ড সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ৪১টি ওয়ার্ডের ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রকে তারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সব কেন্দ্রে সমানভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে। পাশাপাশি ২৪ প্লাটুন বিজিবি, ২৫ প্লাটুন র্যাব, আনসারসহ ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
মেয়রপদে যারা অংশ নিয়েছেন
আওয়ামী লীগ মনোনীত এম রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা এমএ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)।
নির্বাচনে ১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিম মৃত্যুবরণ করায় ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসেন মুরাদ ইন্তেকাল করলে সেখানে আবদুল মান্নানকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ প্রার্থী।
উল্লেখ্য, পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষের আগে গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়ন পর্যন্ত সবই সম্পন্ন হয়। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মাত্র কয়েক দিন আগে স্থগিত করা হয় নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে বুথ চার হাজার ৮৮৬টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে আছেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। সবাইকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এর মধ্যে রয়েছেন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পাঁচ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং কর্মকর্তা ১০ হাজার ২৬৮ জন।
চসিক নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ভোটের জন্য প্রস্তুত ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। চার হাজার ৮৮৯টি বুথের জন্য একটি করে ইভিএম। এ ছাড়া দুটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম অতিরিক্ত আছে। আর ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যাকআপও রাখা হয়েছে।
সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ইভিএমের কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। ভোটার নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। তারপর আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করার পর ভোটারের ছবিসহ পরিচয় পর্দায় ভেসে উঠবে। এরপর গোপন কক্ষে একজন ভোটার মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ তিনটি পদে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের ডান পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। পরে সবুজ বোতাম চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন।
ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম থেকে।