প্রচ্ছদ

মুখের মাস্ক পকেটে রাখায় গুনতে হলো জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পোশাক কারখানায় যাচ্ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তি। উত্তরা হাউজবিল্ডিং পার হতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন তিনি। হাতের ইশারায় থামতেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশ্ন, আপনার মুখে মাস্ক নেই কেনো? জবাবে ওই চালক বললেন, ‘আছে তবে, খুলে পকেটে রেখেছিলাম। হেলমেট পরার কারণে মাস্ক পরতে পারিনি।

চালক আবু বকর সিদ্দিককে সড়কের পাশে মোটরসাইকেল রেখে দাঁড়াতে বলা হয়। মুখে মাস্ক না পরে পকেটে রাখার দায়ে তাকে গুনতে হয়েছে ২০০ টাকা জরিমানা!

শনিবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিংয় চেকপোস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা জেলা প্রশাসন।

করোনা পরিস্থিতিতে ফেস মাস্ক না পরে বাইরে বের হওয়ার অপরাধে মোটরসাইকেলচালক আবু বকর সিদ্দিককে ২০০ টাকা জরিমানা করেন এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল হক।

আবু বকর সিদ্দিক জানান, তিনি একটি পোশাক কারখানায় কমার্শিয়াল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ওই কারখানায় যাচ্ছিলেন তিনি। মোটরসাইকেলের হেলমেট পরার কারণে তিনি মাস্ক খুলে প্যান্টের পকেটে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, আমি সবসময় মাস্ক পরি। কিন্তু আজ হেলমেট পরার কারণে তা পকেটে ছিলো। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাকে জরিমানা করেছেন। যাই হোক ভুল আমার। তবে, এখন থেকে সাবধান হয়ে চলবো।

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে দেশে সপ্তাহব্যাপী ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে। তৃতীয় দিনে জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল থাকলেও অনেকে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন। তবে, তৃতীয় দিনে জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল বেশি দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে উত্তরা হাউজবিল্ডিং চেকপোস্টে সড়কে চলাচলরত সব যানবাহন তল্লাশি করে ছাড়ছেন বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও পিকআপভ্যান ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবায় চলাচলরত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল তল্লাশির আওতার রাখা হয়েছে।

এদিকে যারা রাস্তায় বের হওয়ার কারণ উপস্থাপন করছেন তাদের গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ অধিক মাত্রায় রাস্তায় বের হলে তাদেরকে জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। তাই সড়কে চলাচলরত সব ধরনের পরিবহনগুলোকে তল্লাশি করা হচ্ছে। জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের আইডিকার্ড তল্লাশি করা এবং বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। এতে যারা অকারণে বাসা থেকে রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমাদের অভিযানে মোট ৪২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে লকডাউনে যাত্রী পরিবহন সেবা বন্ধ থাকলেও মোটরসাইকেল যাত্রী পরিবহন করছেন কেউ কেউ। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বিশ্বজিৎ লাল নামে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন বনানী। হাউজবিল্ডিং চেকপোস্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ধরা পড়েন তিনি।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন যাত্রী পরিবহন করছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানতাম না বিষয়টি। পেট চালানোর জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছি। লকডাউনের কোনো ইনকাম নেই, আমি কী খাবো? তাই বের হয়েছি।

আকুতি তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অনুরোধ করলে মোবাইলভিত্তিক পরিবহন সেবা পাঠাও চালক বিশ্বজিৎ লালকে আটক না করে শাস্তি স্বরূপ ৫শ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে তাকে যাত্রী পরিবহন না করার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *