ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর আজ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে জঙ্গি সংগঠন ‘আল-কায়েদা’র সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে হামলা চালায়। এর মধ্যে দুটি বিমান দিয়ে আঘাত করা হয় নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার খ্যাত টুইন টাওয়ারে। ঐ হামলায় ভবন দুটি পুরোপুরি ধসে পড়ে। একটি বিমান আঘাত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের পাশে। অন্যটি বিধ্বস্ত হয় পেনসিলভেনিয়ার শ্যাংকসভিলের এক মাঠে। এই বিমানটির হামলার লক্ষ্যস্থল হোয়াইট হাউজ নাকি মার্কিন ক্যাপিটল ছিল তা এখন স্পষ্ট হওয়া যায়নি। এসব হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
মাত্র ৯০ মিনিটের ব্যবধানে সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলা বলা চলে- পুরো বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে জড়িয়েছে। এই হামলা শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে একাতাবদ্ধ করেনি বরং নিরাপত্তা, অভিবাসন নীতিও বদলে দিয়েছে। বর্ণ বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ বাড়িয়েছে।
৯/১১ হামলা যেভাবে বিশ্বকে বদলে দেয়
মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ট এবিসি নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে, ৯/১১ জঙ্গি হামলা তিনভাবে বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। প্রথমত, নিরাপত্তা নজরদারি বেড়েছে বহুগুণে। বিমানবন্দর, গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর প্রবেশপথে এরপর থেকে নজরদারির জন্য ইলেকট্রিক মেশিনের ব্যবহার বেড়েছে। বিমানের যাত্রীদের তল্লাশি নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ জন ব্লাক্সল্যান্ড এবিসিকে বলেন, ঐ হামলার আগ পর্যন্ত বিমান ছিনতাই হতো জিম্মি করে অর্থ আদায় বা এর বিনিময়ে সুবিধা নেওয়ার জন্য। কিন্তু বিমানকে যে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে এ হামলার আগে কেউ কল্পনাও করেনি। জঙ্গিবিরোধী পলিসি বিশেষজ্ঞ লাইদিয়া খলিল বলেন, নিরাপত্তা নজরদারির কিছু পদক্ষেপ জরুরি ছিল। কিন্তু ঐ হামলার পর এসব বিষয় এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ‘ইসলামি’ সন্ত্রাসবাদ এবং মুসলিমবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি বেড়েছে। ৯/১১ হামলার আগে সন্ত্রাসবাদ শব্দটি ঘরে ঘরে পরিচিত ছিল না। লাইদিয়া খলিল বলেন, এই হামলার আগে আল-কায়েদার নাম শুনেছিল এমন মানুষের সংখ্যা ছিল খুবই কম।
কিন্তু হামলার এক বছর পর এটি সবারই জানা ছিল। এখন কোটি কোটি মুসলিম ঐ হামলার প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। অনেক বৈশ্বিক নীতি তাদের জন্য বৈরী হয়ে দেখা দিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন মুসলিমবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই!
তৃতীয়ত, অন্তহীন যুদ্ধ। এই হামলার পর আফগানিস্তানে আল-কায়েদা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এর ১৮ মাসের মধ্যে ইরাকেও সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব যুদ্ধ শুধু সম্পদ ও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। আল-কায়েদার তৎকালীন প্রধান ওসামা বিন লাদেন মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। কিন্তু জঙ্গি মতাদর্শ ছড়িয়েছে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধে হয়তো আল-কায়েদা দুর্বল হয়েছে কিন্তু তাদের বিস্তৃতি এখন এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই। যুক্তরাষ্ট্রে হয়তো হামলার আশঙ্কা কমেছে কিন্তু সন্ত্রাসীদের একেবারে নির্মূল করা যায়নি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বেড়ে ওঠার সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৯/১১ হামলার ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আফগানিস্তানে বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে জঙ্গিদের দমনের কথা জানিয়েছেন।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জার্নালে বলা হয়েছে, যারা বিপজ্জনক এই ৯/১১ হামলার পরিকল্পনা করেছিল, তারা কখনো কল্পনাও করেনি যে, এই হামলা যে অস্থিরতার বীজ বপন করবে তাতে বিশ্ব বদলে যাবে। সত্যিই বর্তমান বিশ্ব ৯/১১ হামলার আগের বিশ্ব থেকে আলাদা!
তিনটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীতে নিহত মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, তিনি আজ তিনটি হামলাস্থল পরিদর্শন করবেন। বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন প্রথম নিউইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সাইট ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে যাবেন। এখানে দুটি বিমান হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস করে। যার ফলে নিহত হয় ২ হাজার ৭৫৩ জন। এরপর তারা হামলার বাকি দুটি ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করবেন।