মাতৃভূমি

৭ মার্চের ভাষণই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনতার ঘোষণা, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে একদিকে যেমন গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা, অন্যদিকে জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতের রণকৌশলও ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম-’ দুইবার এই কথাটা বলেছেন এবং শেষেরবার সবথেকে জোর দিয়ে বলেছেন। অর্থাৎ এটা যে স্বাধীনতা সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে তা তিনি স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই একভাবে বলতে গেলে ৭ মার্চের ভাষণই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির অত্যাচার-নির্যাতন এবং বঞ্চনার ইতিহাস এবং সবথেকে বড় কথা এই ভাষণের মধ্যদিয়ে একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সঠিক দিক নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে সেই যুদ্ধ করতে হলে কী কী করতে হবে- সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে যার যা কিছু রয়েছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে তিনি বলেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা জানতেন, যে সময় স্বাধীনতার ঘোষণাটা অফিসিয়ালি তিনি দেবেন সে মুহুর্তে তিনি হয়তো বেঁচে নাও থাকতে পারেন। সেজন্য তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে সে সময়ের পূর্ব-পাকিস্তান কিভাবে চলবে জাতির পিতা তাঁর সকল দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সবথেকে ঐতিহাসিক ব্যাপার হলো তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে যে ঘোষণা দিতেন সে নির্দেশনাতেই দেশ চলতো। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ট্রেজারি চালান সবকিছু বন্ধ, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ঐ ৩২ নম্বরে। কেমন ছিল সেই নিয়ন্ত্রণ ? এর উদাপারণ হিসেবে তিনি স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, সে সময় ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে আসলে কোনো বাবুর্চি বাবুর্চি খানায় কাজ করতে চায়নি। বাধ্য হয়ে তখন প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে টেলিফোন আসে যেন ৩২ নম্বর থেকে বলে দেওয়া হয় ‘রান্নাঘরে যেন বাবুর্চিরা কাজ করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীতে আর কোখাও হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। কেননা জাতির পিতা যা যা নির্দেশনা দিয়েছেন তা দেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা জনগণের ম্যানডেট পেয়ে জনগণের নেতায় পরিণত হন এবং তাঁর কথাই এদেশের মানুষ মেনে নিয়েছে।

যুদ্ধের আন্তর্জাতিক সমর্থনের ক্ষেত্রে কে আক্রমণকারী হবে, আর কে আক্রান্ত হবে, সেটা সমর্থনের ক্ষেত্রে একটা বড় ইস্যু হওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনটা ঝুঁকিতে ফেলে বাংলাদেশের মানুষ যেন স্বাধীনতা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই রণকৌশল হাতে নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক যে মুহুর্তে পাকিস্তানী শাসকরা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই মুহুর্তেই তিনি তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণাটা প্রচার করা শুরু করালেন এবং যেহেতু বাঙালিরা পাকিস্তানী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে সেহেতু পরবর্তীতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। তখন বিশ্বজনমত তাঁর পক্ষে (জাতির পিতার)।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করলাম। আর জাতির পিতা তাঁর ৭ মার্চের ভাষণেই একথা বলে গেছেন। অর্থাৎ সে ভাষণে তিনি একটি জাতির জন্য শুধু রণকৌশলই দিয়ে যাননি, নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলতেন-যা কিছু হোক দেশ স্বাধীন হবে। শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয় যুদ্ধের রণকৌশলে তাঁর এই বক্তৃতা যে কত কার্যকর এবং তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যে কতটা বাস্তবমুখী সেটাই হচ্ছে সবথেকে বড় ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *