নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: অবশেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৭০০০ পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়াল। রোববার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রি-ওপেনিং মার্কেটে বেশি মূল্যে শেয়ার কেনাবেচার সুবাদে সূচকটিতে যোগ হয়েছে ৩৮ পয়েন্ট। এর মাধ্যমে উঠে গেছে ৭০১৯ পয়েন্টে।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সূচক গণনার নতুন নিয়ম প্রবর্তনসহ ডিএসইএক্স সূচক চালুর পর এই প্রথম সূচকটি ৭০০০ পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করলো।
সূচকটির বৃদ্ধিতে বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি ভূমিকা রাখছে। তবে একক কোম্পানি হিসেবে বেশি অবদান রাখছে বেক্সিমকো লিমিটেড। লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টা শেষে শেয়ারটির বাজারদর আগের দিনের ১৫৫.৬০ টাকা থেকে ১১৮.২০ টাকায় ওঠায় সূচকে যোগ হয়েছে অন্তত ৬ পয়েন্ট।
এছাড়া স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, লাফার্জ-হোলসিম, বিট্রিশ আমেরিকান টোবাকোর দরবৃদ্ধি সূচকে যোগ করে প্রায় ১২ পয়েন্ট। একক খাত হিসেবে ব্যাংক সূচকের দরবৃদ্ধিতে বেশি অবদান রাখছে। এর পরেরই রয়েছে, ওষুধ ও রসায়ন, বিবিধ, বীমা এবং বস্ত্র খাত।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ৭০০০ পয়েন্টের নতুন মাইলফলক থেকে মাত্র ১৯ পয়েন্ট দূরে থেকে ক্লোজ হয়েছিল। আজ ওই অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। যদিও বৃহস্পতিবার লেনদেনের শেষ অংশে সূচকটি ৬৯৯১ পয়েন্ট পর্যন্ত উঠেছিল।
ডিএসইএক্স সূচক সর্বশেষ ৬০০০ পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়িয়ে ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছিল গত ৩০ মে। সে হিসাবে মাত্র দুই মাসেই দেশের প্রধান এ মূল্য সূচকে যোগ হয়েছে হাজার পয়েন্ট।
এর আগে ৪০০০ পয়েন্ট থেকে ৫০০০ পয়েন্টে এবং ৫০০০ থেকে ৬০০০ পয়েন্টে সূচকটির উঠতে ছয় মাস করে সময় লেগেছিল।
আজকের লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টা শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৭১ পয়েন্ট বেড়ে ৭০৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
এ সময় ডিএসইতে ২৭৪ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬১টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে ৩৫টি শেয়ারকে। এ সময় প্রতিটি খাতের সিংহভাগ শেয়ারই দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায়।
লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টায় এ বাজারে ৪৪০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গঠণের পর থেকে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ফিরেছে।
গত বছরের মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণের সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চলা দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের মধ্যে কমিশনের শীর্ষ পদে নতুন নেতৃত্ব এসেছিল। তখন লকডাউনে অন্য সব কিছুর মত শেয়ারবাজারও বন্ধ ছিল।
লকডাউন শেষ হওয়ার পরই গত বছরের ৩১ মে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তখন ফের দরপতন শুরু হয়েছিল।
শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে শেয়ারবাজার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নানামুখী পদক্ষেপ নেন। বিশেষত শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি করতে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে ২০১১ সালে করা নির্দেশনা মোতাবেক ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা এবং সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পরিপালনে বাধ্য করতে কঠোর অবস্থানে যায় এ কমিশন। এর ফলও মেলে হাতেনাতে।
এর পর রুগ্ন কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনসহ কমিশনের বেশ কিছু উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসা কুড়ায়।
কিন্তু ক্রমাগত বাড়তে থাকা বাজারে পুরনোদের সঙ্গে অনেক কারসাজিকারক জুড়ে যায়। কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্রেফ কারসাজি করে অনেক শেয়ারের দাম রাতারাতি ৫-১০ গুণ করে ফেলে বলে অভিযোগ আছে।
নতুন কমিশন এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বলেও গুঞ্জন আছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানান, বেশ কিছু বড় ও মাঝারি গোছের ব্রোকারেজ হাউসে রীতিমত কারসাজির হাট বসেছে।
শেয়ারবাজার সূচক ৪০০০ থেকে ৫০০০ পয়েন্টে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা কারসাজি থাকলেও বিনিয়োগকারীদের স্বতোঃস্ফূর্ত বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু সূচকটির ৫০০০ থেকে ৬০০০ পয়েন্টে এবং ৬০০০ থেকে ৭০০০ পয়েন্টে ওঠার ক্ষেত্রে কারসাজি করে শেয়ারদর বৃদ্ধিই বড় ভূমিকা রেখেছে বলেও বিশ্বাস তাদের।
সূচকের ঊর্ধ্বগতিকে সাপোর্ট করতে ‘বাজার বাড়লে মার্জিন ঋণ কমবে, বিপরীতে বাজার পড়তে থাকলে মার্জিন ঋণের হার বাড়বে’ গত বছরের সেপ্টেম্বরে করা এমন মার্জিন ঋণ নীতি থেকে গত এপ্রিলে সরে আসে বিএসইসি।
গত এপ্রিলে বাজার মূল্য সূচক যখন ৬০০০ পয়েন্টের নিচে, তখন মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ হার ছিল ৫০ শতাংশ। সূচক ৬০০০ পয়েন্ট পার করলেই তা ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা ছিল।
এ কারণে সূচকটি ৬০০০ পয়েন্টের কাছে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিল।
এ অবস্থায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের জারি করা মার্জিন ঋণ নীতিমালা স্থগিত করে সূচকের ৭০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত মার্জিন ঋণের হার ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বর্তমান কমিশন। তখন বলা হয়েছিল, ওই হার সূচকের ৭০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর পর সূচকটি আরো বাড়লে তা ৫০ শতাংশে নেমে আসবে।
মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ে মধ্যে ডিএসইএক্স ৭০০০ পয়েন্ট থেকে ৩০০ পয়েন্ট দূরে থাকার সময় কমিশন ফের মার্জিন ঋণ নীতি সংশোধন করে ৮০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ মার্জিন ঋণ নিশ্চিত করেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত ডিএসইএক্স সূচকে এ দ্রুত ৭০০০ পয়েন্ট পার করতে সহায়তা করেছে।
আরো পড়ুন: