আইন আদালত

নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪ লাখের বেশি ই-নামজারি আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২২ লাখ ই-নামজারি আবেদনের মধ্যে ১৯ লাখ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের এ পর্যন্ত অনলাইনে পাওয়া ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৪টি আবেদনের মধ্যে ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯টি আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সার্বিক দিকনির্দেশনায়, ২০১৯ সালের ১ জুলাই হতে সারাদেশে একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে, উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিসে এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু রয়েছে।

মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ হতে ম্যানুয়াল আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। সরকারের আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে অন্যান্য ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে ই-নামজারিও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্রচলিত বিধান অনুযায়ী জনগণকে ভূমি অফিসে গিয়ে মিউটেশনের আবেদন করতে হত। এতে জনগণের সময়, অর্থ ও যাতায়াতে অনেক ব্যয় হত। এখন কেন্দ্রীয় ভূমিসেবা কাঠামো land.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই নামজারির জন্য নাগরিকরা আবেদন করতে পারছেন।

ক্রয়সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াই নামজারি বলা হয়। আর ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় সেটিই হচ্ছে খতিয়ান।

ই-নামজারিসহ অন্যান্য ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর একটি অংশ হিসেবে  ই-নামজারি কার্যক্রম ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশের ৭টি উপজেলায় পাইলট আকারে শুরু করা হয়েছিল।

ভূমিসেবা সহজিকরণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলমান উদ্যোগসমূহ পর্যালোচনা করা হয়। ওই সভায় পাইলট আকারে গৃহীত ই-নামজারি সিস্টেমটি পর্যবেক্ষণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ দ্রুত সারা দেশে ই-নামজারি বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন। সে অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ভূমি সংস্কার বোর্ড উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হার্ডওয়্যার সরবরাহসহ কানেক্টিভটি নিশ্চিত করে এবং এটুআই প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারকারী প্রশিক্ষণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।

ব্যক্তি আবেদনে বা এলটি নোটিশ প্রাপ্তির পর সাধারণ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৮ কার্য দিবস, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মহানগরীর জন্য ৯ কার্য দিবস ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১২ কার্য দিবস এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলার বিনিয়োগবান্ধব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭ দিনের মধ্যে নামজারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও সাধারণ ক্ষেত্রে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জমির নামজারি সেবা পাচ্ছেন।

এছাড়া নামজারি আরও সহজ করতে দলিল মূলে নামজারি ও অনলাইনে নামজারি ফি প্রদানের ব্যবস্থা স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্লোগান ‘হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা’-এর ধারাবাহিকতায় নাগরিকরা তাদের দোরগোড়ায় কম সময়ে, কম অর্থ খরচে এবং কম যাতায়াত করেই ভূমিসেবা পাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, এসব উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের স্বীকৃতিসরূপ গত ১৩ ডিসেম্বর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দুবাইতে জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ গ্রহণ করেন। ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত যেকোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৬ জুন জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ বিজয়ী উদ্যোগের নাম ঘোষণা করে। বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিকাশ’ ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ (জাতিসংঘ জনসেবা পুরস্কার ২০২০) অর্জন করে।

আরো পড়ুন:

‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Heroic Freedom Fighter’ || গেজেট প্রকাশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *