শিক্ষা ও সাহিত্য

৩৩ শতাংশ শিক্ষাবিদ থাকবেন ট্রাস্টি বোর্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এর ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫ জন করা হচ্ছে। এতে ৩৩ শতাংশ শিক্ষাবিদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত এবং সময়ের প্রয়োজনের নিরিখে আইন হালনাগাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই খসড়া প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে কমিটি। এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে পাসের লক্ষ্যে সংসদে পাঠানো হবে।

আইন যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ আগস্ট তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।

তিনি জানান, আইনের ওপর বিভিন্ন সুপারিশ প্রায় চূড়ান্তের পথে। আর দু-একটি বৈঠক শেষে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

জানা যায়, ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাশ হয়। ২০১৫ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে এই আইন আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে ওই বছর অক্টোবর মাসে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে ছিলেন। ওই কমিটি বহু আগে প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি সদস্যদের একটি বড় অংশের বিরোধিতার কারণে সংশোধনী ধামাচাপা পড়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৭ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংশোধনীর ওপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (মালিক) সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে শুনানি হয়। এতে সমিতির চার সদস্য যোগ দেন এবং প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধারার ওপর আনা সংশোধনী প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। এ কারণে কার্যক্রম আর এগোয়নি।

আইনের যেসব ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে তার একটি ৬ নম্বর ধারা। বিওটিতে বর্তমানে ন্যূনতম ৯ জন এবং সর্বোচ্চ ২১ সদস্য রাখার বিধান আছে। প্রস্তাবে ন্যূনতম সদস্য ১৫ এবং এক-তৃতীয়াংশ বা ৫ জন শিক্ষাবিদ রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করে শিক্ষক নিয়োগ ও অর্থ কমিটিসহ একাডেমিক উন্নয়নে বিভিন্ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিটির প্রধান থাকবেন উপাচার্য।

৩১(৮) নম্বর ধারা সংশোধন করে উপাচার্যকে সিন্ডিকেটের কাছে দায়বদ্ধ থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান ধারায় বিওটি বা মালিকদের কাছে দায়বদ্ধ হিসেবে প্রস্তাব আছে। খসড়া সংশোধনীতে ৩৫ নম্বর ধারায় ‘বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্বন্দ্ব’ সৃষ্টি হলে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আইনের ৩৭ নম্বর ধারায় ‘কমিশন কর্তৃক প্রণয়নকৃত গাইডলাইন’, ৪৩ নম্বরে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরি, ৪৪ নম্বরে সাধারণ তহবিল পরিচালনা সম্পর্কে নানা নির্দেশনা এবং ৪৮ ও ৪৯ নম্বর ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ এবং শাস্তির ব্যাপারেও সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অস্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গা ২৫ হাজার বর্গফুটের পরিবর্তে ৩৫ হাজার বর্গফুট করার প্রস্তাবও আছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, খসড়ায় বড় ধরনের কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে, বিভাগগুলোতে একাডেমিক উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও সমন্বয় সংক্রান্ত তিনটি কমিটি থাকতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে কমিটি থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকার উপাচার্য নিয়োগ দেবে।

জানা যায়, সংশোধনী প্রস্তাবে আরও বেশকিছু দিক থাকছে। এর মধ্যে আছে-সিন্ডিকেটে ইউজিসি মনোনীত শিক্ষাবিদ সদস্য যুক্ত করা, প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি করে সিন্ডিকেট সভার আয়োজন, টিউশন ফি নির্ধারণের তথ্য ইউজিসিকে অবহিতকরণ, যৌন হয়রানি রোধ ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৯৬টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *