আন্তর্জাতিকবিনোদনসর্বশেষ

২ লাখ গ্রাহক হারিয়ে সংকটের মুখে নেটফ্লিক্স

২ লাখ গ্রাহক হারিয়ে সংকটের মুখে নেটফ্লিক্স

একের পর এক গ্রাহক হারাচ্ছে নেটফ্লিক্স। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২ লাখ গ্রাহক হারিয়ে সংকটের মুখে নেটফ্লিক্স। বিগত ১০ বছরেও এতটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

আশঙ্কাজনকভাবে গ্রাহক কমে যাওয়ায় নিজেদের পুরনো গৎবাঁধা নিয়মকানুন থেকে সরে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার নেটফ্লিক্সে থাকবে বিজ্ঞাপন সাপোর্টেড অপশন। এ ছাড়া নেটফ্লিক্স হবে আগের তুলনায় সস্তা। এমনটাই জানিয়েছেন নেটফ্লিক্সের কর্তাব্যক্তিরা।

এর আগে সহজেই একজন গ্রাহক অন্য একজনের সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে পারতেন। তবে এবার আর সে সুযোগ দেবে না নেটফ্লিক্স। এ ছাড়া মুভি ও টিভি শো কেনার ব্যাপারে আগের চেয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

যদিও শুরুতে নেটফ্লিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হ্যাসটিংস বলেছিলেন, নেটফ্লিক্সে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন থাকবে না ও পাসওয়ার্ড শেয়ার করলেও কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। তবে সেই নীতি থেকে সরে আসছেন হ্যাসটিংস। তবে আরও আশঙ্কার কথা হচ্ছে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নেটফ্লিক্স ২০ লাখ গ্রাহক হারাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহক নেটফ্লিক্সে সাবসক্রাইব করে থাকে। সেখান থেকে এক ধাক্কায় ২০ লাখ গ্রাহক হারিয়ে ফেলা প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি বড় রকমের ধাক্কা হবে।

এ ব্যাপারে মোফেট ন্যাথানসনের ব্যবসা বিশ্লেষক মাইকেল ন্যাথানসন বলেছেন, ‘ব্যাপারটি সত্যই আশ্চার্যজনক। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে রয়েছে আমি। মাত্র কয়েক মাসে কি করে একটি প্রতিষ্ঠান এত বড় সংকটের সম্মুখীন হয়, আমার মাথায় আসছে না।’

যদিও বছরের শুরুতে বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক ও হলিউডের কার্যনির্বাহীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছলিনে, নেটফ্লিক্সের বছরের প্রথমার্ধ যাবে একদম ঢিমেতালে। তবে ওয়াল স্ট্রিট নেটফ্লিক্স নিয়ে আশাবাদী ছিল। সংস্থাটি জানিয়েছিল, বছরের প্রথমার্ধে নেটফ্লিক্স ২৫ লাখ নতুন গ্রাহক পাবে। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি কমতে থাকে নেটফ্লিক্সের শেয়ারের দাম। চলতি বছরে নেটফ্লিক্সের শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

করোনাসময়ে মানুষ যখন ঘরবন্দি তখনই নেটফ্লিক্স তাদের নতুন আপডেট নিয়ে আসে। এতে স্লো সাইন-আপ থেকে সরে এসে কোম্পানিটি স্পিড বাম্পের দিকে যাত্রা শুরু করে। লকডাউনের সময়টাতে গ্রাহকদের কাছে নেটফ্লিক্সের গ্রহণযোগ্যতা হয় আকাশচুম্বী। ধারণা করা হয়েছিল, নেটফ্লিক্স তার এই ধারা বজায় রাখতে পারবে। তবে বছরের প্রথমার্ধেই বদলে গেছে সে ধারণা।

নেটফ্লিক্সের গ্রাহক কমে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ জানায়, পাসওয়ার্ড শেয়ারিং এর ফলে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নেটফ্লিক্স। কোনো ধরনের অর্থ প্রদান ছাড়াই বর্তমানে প্রায় ১০০ মিলিয়ন পরিবার ও ২২২ মিলিয়ন সাবসক্রাইবার নেটফ্লিক্স ব্যবহার করে।

এ ছাড়াও শুরুতে বাজারে এতটা প্রতিযোগিতা না থাকলেও দিনকে দিন নতুন নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচিতি লাভ করছে। এতে গ্রাহকরা সেরা অফারটি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে নেটফ্লিক্স হারিয়েছে তার একাধিপত্য।

এদিকে অনলাইন প্রোডাকশন হাউসগুলো পরিচিতি লাভ করার ফলে কমে গেছে টিভির দর্শক। এতে করে মার্কিন বিনোদন প্রতিষ্ঠানের কর্তা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ধাত বদলে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে টেক্কা দিতে মাঠে নেমেছে। এর মধ্যে ডিজনি, এইচবিও ম্যাক্স ও ডিসকভারি ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।

এরা প্রত্যেকেই বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে শুরু থেকে গুরুত্ব দিয়ে আসছিল। ফলে অর্থ ও বিনিয়োগ দুটোতেই বেশ সাড়া পেয়েছে বাজারে আসা নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। হেস্টিংস শুরু থেকে বলে আসছিল, ‘মানুষ টিভি না দেখে নেটফ্লিক্স দেখে, কারণ আমাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন নেই। আর বিজ্ঞাপন কেনার ব্যাপারে আমরা ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে চাই না।’ শেষমেশ পথ বদলাতে হচ্ছে নেটফ্লিক্সকে। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিজ্ঞাপনের দিকে আগ বাড়াচ্ছে নেটফ্লিক্স।

এ ব্যাপারে হেস্টিংস বলেছে, ‘আমরা নেটফ্লিক্সের সাবসক্রিপশন ফি কমিয়ে দিব ও বিজ্ঞাপন জুড়ে দিব। আশা করি এটা গ্রাহকদের জন্য ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ হিসেবে কাজ করবে।’

বেশ কয়েকটি দেশে ত্বরিত বেগে নেটফ্লিক্স তদের গ্রাহক হারিয়েছে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্স তাদের সাবসক্রিপশন ফি বাড়িয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহক কমে যায়। একইভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়াতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ফলে ইউরোপের একটি বড়সংখ্যক গ্রাহক হারাতে হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রাহক কমেছে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতে।

নাথানসন বলছেন, ‘আমরা কেন গ্রাহক হারাচ্ছি কিংবা আমাদের পথচলা কেন ধীরগতিতে হচ্ছে তার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। তবে কীভাবে আমরা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াব সেটি নিয়া আমাদের কাজ করতে হবে।’

সবদিকে লোকসানের ছোঁয়া পেলেও এশিয়াতে নেটফ্লিক্সের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। নেটফ্লিক্স এশিয়াকে তাদের ‘ব্রাইট স্পট’ হিসেবে দেখছে। এই অঞ্চলটিতে বছরের প্রথমার্ধে ১০ লাখ গ্রাহক বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মটিতে দক্ষিণ কোরিয়ান সিরিজ ‘অল অফ আস আর ডেড’ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নেটফ্লিক্সের কিছুটা বেহাল দশা হলেও অন্যান্য দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত নেটফ্লিক্স তাদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যাপারে নেটফ্লিক্সের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ জানিয়েছে, নেটফ্লিক্স দ্রুত তাদের দুরবস্থা কাটিয়ে উঠবে। প্ল্যাটফর্মটিকে কি করে আরও গ্রাহকবান্ধব করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাই। বছরের শেষার্ধে আরও কিছু জনপ্রিয় নতুন শো যোগ হবে প্ল্যাটফর্মটির স্লেটে। পেমেন্ট সিস্টেম ও শো কোয়ালিটি নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে নেটফ্লিক্স তার পুরোনো অবস্থান ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা।

সূত্র: ব্লুমবার্গ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *