খেলাধুলা

২১৭ রানে শেষ বাংলাদেশ, ফলো-অন করায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা

দিনের শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন দুই অপরাজিত ব্যাটার ইয়াসির আলি রাব্বি ও মুশফিকুর রহিম। দুজনের জুটিতে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম সেশনে শেষ দিকে ইয়াসিরের বিদায়ের মাধ্যমে শুরু হয় দলীয় পতনের।

শেষ পর্যন্ত ১৪.৩ ওভারের ব্যবধানে মাত্র ২৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে করা ৪৫৩ রানের চেয়ে ২৩৬ রানে পিছিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশকে ফলো-অন করাননি স্বাগতিক অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি।

আগেরদিন করা ৫ উইকেটে ১৩৯ রান নিয়ে আজকের দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। আজ আর ৩৩.২ ওভারে মাত্র ৭৮ রান করতেই সাজঘরের পথ ধরেছেন বাকি পাঁচ ব্যাটার। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেছেন আত্মঘাতী রিভার্স সুইপে আউট হওয়া মুশফিকুর রহিম।

পোর্ট এলিজাবেথের সেইন্ট জর্জেস পার্কে আজকের দিনের খেলা শুরুর আগেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা ছিল। অন্ধকারে ছেয়ে ছিল পুরো স্টেডিয়াম। তবু যতটুকু আলো ছিল তাতেই দিনের খেলা শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দুই আম্পায়ার। মাঠেও নেমে গিয়েছিলেন দুই দলের ক্রিকেটাররা।

কিন্তু প্রথম বল করার আগেই নামলো বৃষ্টি। ফলে মাঠে গড়ালো না কোনো বল। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দৌড়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ দলের দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি রাব্বি। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররা ধীর পায়ে অনেকটা অনিচ্ছা নিয়েই মাঠের বাইরে যান।

বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় শুরুর কথা ছিল পোর্ট এলিজাবেথ (গেবেখা) টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে যথাসময়ে শুরু হয়নি আজকের খেলা। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে উইকেট ও এর আশপাশের জায়গা ঢেকে দেওয়া হয় কভার দিয়ে। পরে ২০ মিনিট দেরিতে শুরু হয় খেলা।

দিনের খেলা শুরুর পর লিজাড উইলিয়ামসের করা প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলেই তিন বাউন্ডারি হাঁকান ইয়াসির রাব্বি। উইলিয়ামসের পরের ওভারের প্রথম বলেও হাঁকান বাউন্ডারি। আরেক পেসার ডোয়াইন অলিভারকেও অন ড্রাইভে চার মারেন তিনি।

সবমিলিয়ে দিনের প্রথম পাঁচ ওভারেই ২৭ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। যার মধ্যে ছয় চারের মারে ২৬ রান একাই করেন ইয়াসির। অন্য রান আসে লেগ বাই থেকে। আরেক অপরাজিত ব্যাটার মুশফিক প্রথম পাঁচ ওভারে ৫ বল খেলে কোনো রান নিতে পারেননি।

এমন উড়ন্ত শুরুর পর নিজেদের ব্যাটিংয়ে লাগাম টানেন মুশফিক-ইয়াসির। বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজকে আক্রমণে এনে রানরেটটাও কমিয়ে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবু সুযোগ পেলেই উইয়ান মাল্ডার কিংবা মহারাজকে বাউন্ডারি হাঁকাতে কার্পণ্য করেননি মুশফিক বা ইয়াসির।

শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৬০তম ওভারে গিয়ে আঘাত হানেন মহারাজ। সেই ওভারের চতুর্থ বলে ইয়াসিরের বিপক্ষে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন করেও সফল হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজেদের শেষ রিভিউ নিয়েও উইকেট আদায় করতে পারেনি তারা।

কিন্তু একই ওভারের শেষ বলে অনসাইডে খেলতে গিয়ে লিডিং এজে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বসেন ইয়াসির। বলটি তালুবন্দী করেই উল্লাসে ফেটে পড়েন মহারাজ। আউট হওয়ার আগে ৭ চারের মারে ৮৭ বলে ৪৬ রান করেন ইয়াসির। তার বিদায়ে ভাঙে ৭২ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।

ইয়াসির না পারলেও চলতি ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম হাফসেঞ্চুরিয়ান হওয়ার আশা বাঁচিয়ে রেখে খেলতে থাকেন মুশফিক। তাকে ভরসা দিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং শুরু করেন আট নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজও। এর মধ্যে অলিভারের বাউন্সারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নির্ভরতার বার্তাই দেন তিনি।

কিন্তু মুশফিক পারেননি বেশিক্ষণ থাকতে। সাইমন হার্মারের করা ইনিংসের ৬৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৫তম ফিফটি। এর এক বলই রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ১৩৬ বলে ৮ চারের মারে ৫১ রান করা মুশফিক।

এরপর মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আর বিপদ ঘটতে দেননি মেহেদি মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। বিরতির আগপর্যন্ত ২৩ বলে ৯ রান করেছেন মিরাজ। তাইজুল ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি। এই প্রথম সেশনের ২৯ ওভারে ৭১ রানে ২ স্বীকৃত ব্যাটারের উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

পরে দ্বিতীয় সেশন শুরুতেই হার্মারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তাইজুল। টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে বড় শট খেলতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে ৫ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।

ঠিক পরের ওভারে ছক্কা হাঁকাতে যান মেহেদি মিরাজও। মহারাজের বলে তার স্লগ সুইপটি ব্যাটে-বলে ভালোভাবেই সংযোগ ঘটে। কিন্তু পার হয়নি ডিপ মিড উইকেট সীমানা। একদম বাউন্ডারির মাথায় দাঁড়িয়ে নিরাপদে ক্যাচ নিয়ে ১১ রান করা মিরাজের বিদায়ঘণ্টা নিশ্চিত করেন অলিভার।

শেষ উইকেট তুলে নিতে বেশি সময় লাগেনি দক্ষিণ আফ্রিকার। মিরাজ আউট হওয়ার দুই বল পর হার্মারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লিজাড উইলিয়ামসের হাতে ধরা পড়েন এবাদত হোসেন। বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ২১৭ রানে, দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ২৩৬ রানে পিছিয়ে থেকে।

স্বাগতিকদের পক্ষে সমান ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন সাইমন হার্মার ও উইয়ান মাল্ডার। এছাড়া অলিভার ও মহারাজের শিকার ২টি করে উইকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *