অপরাধ ও দূনীতি

২০ কোটির লোকসান ঠেকাতে ৫০০ কোটি লোপাটের ব্যবস্থা

জ্বালানি তেলে প্রতিদিনের ২০ কোটি টাকার লোকসান পোষাতে সরকার প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে মূল্য বৃদ্ধি করেছে। লোকসান কমানোর নামে করোনায় দেশে সংকটাপন্ন সাধারণ মানুষের পকেট থেকে প্রতিদিন ৫০০ কোটি টাকা লোপাটের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হলো। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ কথা বলেছেন। দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটিও অবৈধ বলে দাবি করেছে এই সংগঠন।
গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক দাম বাড়ানোকে পুরোপুরি অযৌক্তিক অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ আছে। জ্বালানি খাতে মূল্য না বাড়িয়ে আমাদের ছয় লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট থেকে বছরে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। সংকট কেটে গেলে ধাপে ধাপে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা যেত।’
মোজাম্মেল হক জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে ২০১৩ সালে তেলের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অর্ধেকে নেমে এলেও সরকার লিটারপ্রতি মাত্র তিন টাকা দাম কমিয়েছিল। পরে আরো দুই দফায় দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে তিন টাকা মূল্য কমানোর সুফল ব্যবসায়ীরা পেলেও যাত্রীসাধারণসহ সাধারণ মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টারত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকা সচল রাখার স্বার্থে বর্ধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ও পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও দাবি জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
মহাসচিব বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে লকডাউনসহ নানা কারণে দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। ফলে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এমন সংকটাপন্ন দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন দিশাহারা, ঠিক তখনই জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হলো। এতে মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, খাদ্যপণ্য ও কৃষিজ উৎপাদনসহ সামগ্রিক ব্যয় আরো কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। পণ্য ও সেবামূল্য আরো এক দফা বৃদ্ধির ফলে চরমভাবে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। এতে নতুন করে আরো কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় সরকার উচ্চহারে তেল বিক্রি করে গত ছয় বছর একচেটিয়া মুনাফা করেছে। এতে সরকার প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। মাত্র পাঁচ মাস ধরে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে একলাফে ২৩ শতাংশ তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, যে প্রক্রিয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে, তা অবৈধ। জ্বালানির দাম বাড়ানোর কোনো ক্ষমতা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নেই। এটা করার ক্ষমতা বিইআরসির। সেখানে শুনানির পরেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিয়ম। সরকার গায়ের জোরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের নেতাকর্মীদের বিরাট অংশের আয় বৃদ্ধিকে সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি মনে করে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *