উন্নয়ন

২০২৪ সালে মাথাপিছু আয় হবে ৩ হাজার ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বর্তমানে এ আয় ২,২২৭ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে আগামী তিন বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে প্রায় ৮০০ ডলার (প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরলে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা)। সরকারের নেওয়া এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থবিভাগ থেকে বাজেট ডকুমেন্টের সঙ্গে প্রকাশিত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ এ সরকারের নেওয়া তিন বছরমেয়াদি পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৩০১৪ ডলারে। ২০২২-২৩ এ এটা হবে ২৭১৭ ডলার, সদ্য শুরু হওয়া অর্থবছর ২০২১-২২ শেষে এটা হবে ২৪৬২ ডলার। আর ৩০ জুন ২০২১ এ সমাপ্ত হওয়া অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে এটা হবে ২২২৭ ডলার। যার তথ্য ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে বিবিএস। অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে এবার মাথাপিছু আয় সামান্য কমেছে। গত অর্থবছরে এটা ছিল ২৩২৬ ডলার। অথচ স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৮ ডলার।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতা-২০২১-২২ এ উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার, যা প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এমন মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে এ বছর ভারতকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ। উচ্চ মাথাপিছু আয়ের ধারা অব্যাহত রেখে টেকসই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে চায় সরকার। যা ২০৩১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ আয়ের কাতারে নিয়ে যাবে বলে তিনি বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের তথ্যানুসারে, গত ১৫ বছরে দারিদ্র্যের হারও কমে অর্ধেক হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও, বর্তমানে এ হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে দারিদ্র্যের এ হার আবারও ৪০ শতাংশে উঠেছে বলে একাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জরিপে তথ্য উঠে এসেছে। তবে সরকার বলছে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেটা সাময়িক। কেননা বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার প্রভাবে বেশির ভাগ দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জন কমলেও ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ।

তথ্যমতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ১৯১ ডলার। আর পাকিস্তানকে অনেক আগেই আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। দেশটির মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫৪৩ ডলার।  ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল ৬৭৬ টাকা (৮৮ ডলার)। সে হিসাবে একজনের দৈনিক আয় ছিল ১ টাকা ৮৫ পয়সা। সেখান থেকে ক্রমাগতভাবে বেড়ে বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৯১ হাজার ৫২২ টাকা। দৈনিক হিসাবে প্রতিজন বর্তমানে ৫২৫ টাকা আয় করেন, যা আগের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪৩তম দেশ এবং দ্রুত বর্ধনশীল দেশসমূহের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক সহনশীলতা রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে মাথাপিছু আয় হবে ৩ হাজার ডলার আর ২০৪১ সালে এটা হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *