পর্যটন ও পরিবেশ

১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নির্মল বাতাস ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। তবে এবার ঈদের ছুটিতে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। এ সময় বিশ্বের অন্যতম নির্মল বায়ুর শহরে পরিণত হয় ঢাকা। ঈদের পরদিন একটি বড় সময় নির্মল বাতাস পায় রাজধানীবাসী। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকার বাতাস ছিল ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো।

ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকা ছাড়া, নির্মাণকাজ বন্ধ ও গাড়ি চলাচল সীমিত থাকার কারণে বায়ুর মানের উন্নতি হয়েছে।

বিশ্বের বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণে এই চিত্র এসেছে। তাদের তথ্য পর্যালোচনা করেছে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস)। এয়ার ভিজ্যুয়াল ২০১৬ সাল থেকে ঢাকাসহ বিশ্বের ৯৬টি শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বাতাসে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-১০ ও পিএম-২.৫–এর মাত্রা অনুযায়ী ওই মান পরিমাপ করা হয়। মূলত কোনো শহরে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলা ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া মিলে বায়ুর মান খারাপ হয়। ঈদ সামনে রেখে ঢাকা থেকে প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যায়। মেট্রোরেলসহ বেশির ভাগ নির্মাণকাজ ছিল বন্ধ। আর কঠোর লকডাউনের কারণে ঈদের পরের দুই দিনও ঢাকায় গাড়ি চলাচল ছিল খুবই কম। এই সবকিছু মিলিয়ে বায়ুর মানের অস্বাভাবিক উন্নতি হয়।

ঈদের দিন থেকেই ঢাকার বায়ুর মান ভালো হতে শুরু করে। গত বছরের ঈদের দিনের তুলনায় এবার ঢাকার বায়ু প্রায় তিন গুণ বেশি সময় খুবই ভালো ছিল। ঈদের পরের দুই দিন ঢাকার বায়ুর মানের সূচক গড়ে ৫০–এর নিচে ছিল, যা মোটামুটি ভালো হিসেবে ধরা হয়। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে এই সূচক ২০০–এর বেশি থাকে। কখনো কখনো তা ৩০০–এর কাছাকাছি চলে যায়। নির্মল বাতাসের প্রভাব পড়েছে মানুষের দৃষ্টিসীমায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ঢাকায় ২ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের জিনিস দেখা যায়, সেখানে এ সময় ৭ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের জিনিস দেখা গেছে।

* ঈদের পরের দুই দিন ঢাকার বায়ুর মানের সূচক গড়ে ৫০–এর নিচে ছিল।

* গতকাল বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৩ নম্বরে ছিল দিল্লি, ঢাকার অবস্থান ছিল ৬৮তম।

* নির্মল বাতাসের প্রভাব পড়েছে মানুষের দৃষ্টিসীমায়।

এ বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্যাপসের পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২২ জুলাই ঢাকার বায়ুতে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এ ধরনের বায়ুর মান সাধারণত গবেষণার ল্যাব ও উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্যকর শহরগুলোতে পাওয়া যায়।

সোমবার ঢাকার বায়ুমান সূচক ছিল ৪১। এদিন এয়ার ভিজ্যুয়ালের করা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৩ নম্বরে ছিল দিল্লি। ওই তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল ৬৮তম।

এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক কারণে বিশ্বের অনেক শহরের বায়ুর মান খারাপ থাকে। যেমন আরব অঞ্চলের কাতার, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব ও মিসরের বায়ুর মান বেশির ভাগ সময় খারাপ। কারণ, এসব দেশের ভেতরে ও পাশের মরুভূমি থেকে প্রচুর ধূলিকণা উড়ে আসে। আবার অস্ট্রিলিয়ার মেলবোর্ন, ক্যানবেরা, পার্থ, অ্যাডিলেড শহর এবং ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন ও গ্রিসের বায়ুর মান প্রাকৃতিক কারণে ভালো থাকে। এসব দেশের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ভালো। তা ছাড়া শহরের আশপাশে ধূলিকণার বড় কোনো উৎস নেই।

আবার প্রাকৃতিকভাবে নির্মল বায়ু থাকার কথা থাকলেও ধোঁয়া, ধুলা ও অতিরিক্ত কয়লা পোড়ানোর কারণে বিশ্বের অনেক শহরের বায়ুর মান সব সময় খারাপ থাকে। যেমন মঙ্গোলিয়ার উলানবাটার, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও চীনের বিভিন্ন শহর।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঈদ ঘিরে মোট ৫০ দিন ঢাকায় বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে। দেখা যায়, ৫০ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৬ দিন বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করে। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরের পরের ২ দিন বায়ুমান সূচক ছিল ৪২ ও ৩৬ এবং ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের পরদিন বায়ুমান সূচক ছিল ৩৭, ২০১৯ সালে ঈদুল আজহার পরের দুই দিন বায়ুমান সূচক ছিল ৪৯ ও ২২, আর ২০২১ সালে ঈদুল আজহার এক দিন পর বায়ুমান সূচক ৪৪ ছিল।

রাজধানীর চারপাশের ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া আর নির্মাণকাজের ধুলার কারণে এই শহরের বায়ু বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় বারবার শীর্ষে উঠে আসছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘সবাই সচেতন হলে ঢাকার বায়ুর মান ভালো থাকত। কারণ, ঢাকার চারপাশে নদী, বছরের অর্ধেক সময় বৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক কারণে এখানকার বায়ুর মান ভালো থাকার কথা। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া আর নির্মাণকাজের ধুলার কারণে এই শহরের বায়ু বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় বারবার শীর্ষে উঠে আসছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *