নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)চীনা করোনা টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) দ্রুত শুরু করার জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরীক্ষা সফলভাবে শেষ হলে টিকা তৈরির প্রযুক্তি পাবে বাংলাদেশ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
আইসিডিডিআরবি চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার পরীক্ষার সরকারি অনুমতি পায় গত বৃহস্পতিবার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ওই দিন সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক অনুমতির কথা ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর চীন থেকে টিকা আমদানির অনুমোদন দেয়।
সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও গত শুক্র ও শনিবার আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা টিকার কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে একাধিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী জানিয়েছেন। আইসিডিডিআরবি চীন থেকে টিকা আনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি ও যোগাযোগ শেষ করেছে। এখন টিকা আসার অপেক্ষা। ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে চীন থেকে টিকা আসবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন।
ঢাকার ৭টি হাসপাতালের ৪ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা এসব হাসপাতাল ইতিমধ্যে ঘুরে দেখেছেন। তবে এসব হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এখনো আইসিডিডিআরবি পায়নি। কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই সপ্তাহে সেই অনুমতিও পাওয়া যাবে।
মাঠপর্যায়ে ২৫০ জন গবেষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আজ-কাল নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
প্রশিক্ষিত মাঠ গবেষকেরা স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেবেন এবং পরবর্তী কয়েক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
টিকা গবেষণার মুখ্য গবেষক ও আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে জামান বলেন, সুনির্দিষ্ট দিন বলা সম্ভব না হলেও এটুকু বলা যায় যে খুব শিগগির পরীক্ষা শুরু করা হবে।
পরীক্ষায় স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলবে প্রায় দুই মাস ধরে। এই কাজ শেষ করতে হবে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ বজায় থাকা পরিস্থিতিতে। টিকা দেওয়ার পর আরও প্রায় ৬ মাস স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন মাঠ গবেষকেরা।
সিনোভ্যাকের সঙ্গে আইসিডিডিআরবির টিকার পরীক্ষার চুক্তিতে বাংলাদেশ কী সুবিধা পাবে, তার উল্লেখ আছে।
চুক্তিতে বলা আছে :- টিকার পরীক্ষা সফল হলে সিনোভ্যাক বাংলাদেশকে টিকা তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর (টেকনোলজি ট্রান্সফার) করবে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের কোম্পানি দেশেই টিকা উৎপাদন করতে পারবে। তবে এ রকম কোম্পানি দেশে আছে দুটি। তিন মাস আগে এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানি ইনসেপটা ও পপুলারের বৈঠক হয়েছিল।
গত শুক্রবার রাতে পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের বৈঠকে টিকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সরকার বিনামূল্যে ও অল্প মূল্যে টিকা সংগ্রহের জন্য কী কী করছে, তা বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ ও কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে। টিকা সংগ্রহের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।
অন্যদিকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বিপিএল) ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের (এসআইআই) মধ্যে টিকার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকার উন্নয়নে এসআইআইয়ে বিনিয়োগ করবে বিপিএল। বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে গত পরশু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, টিকা যখন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাবে, তখন যেসব দেশ সবার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করবে এসআইআই।