খোকন কুমার রায়:
“বুয়া, তোমায় এবার দিলাম ছুটি
করোনার রাজ্যে গৃহ কর্মময়,
গৃহস্থালী কাজ যেন, বাঁ হাতের গুটি”
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই করোনা উপদ্রপের কারণে লকডাউনে যাবার পর থেকে অদ্ভূত ও মজার মজার সব ছবি ও সংবাদ পাচ্ছি। যেমন- অনেকেই ঘরে বসে চুল দাড়ি কাটছে, জন্মদিনের কেক বানাচ্ছে, কেউবা ‘ঝাড়ু দেয়ার সময় সামনে যেতে হয়, আর ঘর মোছার সময় পেছনে আসতে হয়’ প্রভৃতি সূত্র আবিষ্কার করছে।
আরও পড়ুন: আমাদের দেশে হবে সেই নেতা কবে, আত্মপ্রচারে মন না দিয়ে কাজে মন দিবে
আবার কেউবা সমান্তরাল বা এলোমেলো প্যাচের জিলাপী বানিয়ে বাহবা পাচ্ছে; আর মহিলারা ঘরে বসেই রূপচর্চা করছে। আমাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে বিউটি পার্লার, সেলুন, খাবার হোটেল প্রভৃতির মালিকরা মনে হয় দুশ্চিন্তায় আছে, ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসা টিকবে কিনা।
আমরা অনলাইনে আড্ডা দিচ্ছি, ক্লাস করছি এবং বিভিন্ন রকম বদঅভ্যাস থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছি।
কেউবা মজার মজার কার্টুন ও লেখা শেয়ার করছে এবং শিশুদের দিকে একটু বেশিই নজর দিচ্ছে। আর শিশুরাও দীর্ঘসময় বাইরে অবস্থান করা পিতা-মাতা ও পরিজনকে কাছে পেয়ে আনন্দে সময় কাটাচ্ছে।
এই লকডাউনে আমাদের আরেকটা বড় অর্জন হচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা। আর সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার কোম্পানিগুলোর বড় অর্জন- ব্যাপক ব্যবসা, যা সুদীর্ঘকাল ধরে চলবে এমন প্রত্যাশাই তারা করছেন।
আমরা এমন কিছু কাজ করছি যা নিজেরা করতে পারি, কখনো ভাবতেই পারিনি। এখন এটা প্রমাণিত যে, প্রয়োজনে বা বাধ্য হলে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি।
ভাবতে অদ্ভূত লাগে, আমরা যে এত প্রতিভাধর, এত কিছু পারি তা হয়তো লকডাউনের আগে অনেকেই জানতাম না! এই যে আমি, ক্রমাগত একটার পর একটা আবোল তাবোল লিখে যাচ্ছি, এটাও লকডাউনের আগে আমার জানা ছিল না। কারণ, আমার ২৪ ঘণ্টা কাটতো নানামুখী ব্যস্ততায়। দীর্ঘদিন এসব লেখালেখি থেকে একটু বিচ্ছিন্নই ছিলাম।
যা হোক, এই লকডাউনের দীর্ঘ সময়টায় আমরা অনেকেই নিজেদের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করলাম যা হয়তো সামনে কাজে আসবে। আর জানলাম, আমাদের পরিবার-পরিজন যারা গৃহিনী বা বৃদ্ধ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী এবং স্কুল পড়ুয়া শিশুরা, যারা প্রায় সর্বদাই ইট-পাথরের চার দেয়ালে বন্দী অবস্থায় থাকে, তাদের কেমন লাগে!
আমি অতীতে কখনোই আমার বাচ্চাদের এতটা সময় দিতে পারিনি। এখন রোজ দীর্ঘ সময় তাদের খেলার সাথী হই, পরিবারের অন্য সদস্যরাও অনেক সময় পায়।
কাজেই আসুন, সংকটকালীন এই সুঅভ্যাসগুলো সর্বদা ধরে রাখি, জীবনকে নানান বর্ণে বর্ণিল করে তুলি এবং বহুমুখী প্রতিভার চর্চা অব্যাহত রাখি।
শুভ কামনা।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু.কম।