প্রচ্ছদ

হাসপাতালেও বই পড়তে চান সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: কোভিড আক্রান্ত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শারীরিক অবস্থা তেমন সুবিধার নয়। দুর্বলতা কাটছেই না। মাঝেমধ্যেই ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। ৮৭ বছর বয়সী মুহিত এমন শারীরিক অবস্থার মধ্যেও চাইছেন পত্রিকা ও বই পড়তে। শনিবার মুহিত তাঁর ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে এমন চাওয়ার কথা জানান। ওই দিনই তাঁকে বেশ কয়েকটি বই ও পত্রিকা পাঠানো হয় এমনটাই জানিয়েছেন  পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘনিষ্ঠ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতি বরাবরই ঝোঁক মুহিতের। যত কাজের চাপই থাকুক না কেন, নিয়মিত পত্রিকা ও বই পড়েন। বরাবরই সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডেও যুক্ত থাকতেন মুহিত। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে আন্তর্জাতিক বহু জার্নাল ও বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার রয়েছে। বর্তমানে তিনি সিলেটের ৮৫ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের চরম শারীরিক অসুস্থতার মাঝেও আবুল মাল আবদুল মুহিতের পত্রিকা ও বই পড়তে চাওয়ার ইচ্ছা তাঁর দীর্ঘ জীবনে ধারাবাহিক সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতিফলন।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, অসুস্থ ভাইকে দেখতে শনিবার ঢাকা সিএমএইচে যেতে চেয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। কিন্তু কভিড আক্রান্ত হাসপাতালে যাওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সেখানে যাওয়া হয়নি তাঁর। পরে তিনি ভিডিও কলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসকদের কাছে মুহিতের শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত জানেন।

জানতে চাইলে গতকাল মুহিতের ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উনি (মুহিত) বলছিলেন, চিকিৎসা তো সব ঠিক আছে। কিন্তু এখানে পত্রিকা তো নাই, বইও নাই। সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, তোমার ওখানে বই চলে যাবে। শেলফে যে বইগুলো ছিল সেগুলোই পাঠিয়ে দিয়েছি। তখন (শনিবার) উনার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো ছিল। ফলে তিনি বই, পত্রিকা চেয়েছিলেন।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এমনিতে উনার অভ্যাস হলো সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সব পত্রিকা পড়া। উনি যেখানে চিকিৎসাধীন, সেখানে পত্রিকা সরবরাহ করা হয় না। উনি বলার পর আমরা নিজেদের উদ্যোগে পত্রিকা, বই পাঠিয়েছি। চার-পাঁচটি বই হাতের সামনে ছিল, সেটাই তাত্ক্ষণিকভাবে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

মুহিতের অবস্থার কথা জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উনার শারীরিক অবস্থা ভালো না। এখন (গতকাল সকালে) ইনজেকশন দিয়ে উনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। খাওয়াদাওয়া খুব একটা করেন নাই। শনিবার রাতে আমি জানতে চাইলাম, কী খেয়েছ। উনি বললেন, স্যুপ আর আপেলের একটা টুকরা খেয়েছেন। রুটি, ভাত কিছুই ছুঁয়েও দেখছেন না। রবিবার সকালেও তেমন কিছুই খান নাই। উনি খিচুড়ি, ডিম খেতে পছন্দ করেন। সকালে সেটা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনি খান নাই। খুবই দুর্বল হয়ে গেছেন।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উনি কভিড ভ্যাকসিনের দুই ডোজই নিয়েছেন। এটার জন্যই আমরা কিছুটা অভয় পাচ্ছি। উনার বাসায় মোটামুটি সবারই কভিড হয়েছে। একজন ছাড়া সবাই অসুস্থ। সে কারণে আমরা উনাকে বাসায় রাখিনি। তবে উনার ফুসফুসের সংক্রমণও আছে। ওটা নিয়ে আমরা চিন্তিত। আর উনার বয়সও তো হয়েছে। এমনিতে উনি কিন্তু খুবই স্পোর্টিং একজন মানুষ। কিন্তু কভিড উনাকে কিছুটা কাহিল করে ফেলেছে।’

৮৭ বছর বয়সী মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালে। ছাত্রজীবন থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে খ্যাতি ছিল মুহিতের। তিনি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরেজি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন মুহিত। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদানের মধ্য দিয়ে আমলা হিসেবে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারেরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *